মোঃ আতিকুর রহমান, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি আসন থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়,সুনামগঞ্জ-১ আসনে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে রনজিত চন্দ্র সরকার, গণফ্রন্ট থেকে মো. জাহানুর রশীদ, স্বতন্ত্র থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, সেলিম আহমদ, বিনয় ভূষণ তালুকদার ও সুপ্রীম পার্টির হারিছ মিয়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঋতেশ রঞ্জন দেব, গণতন্ত্রী পার্টির মিহির রঞ্জন দাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান, ড. জয়া সেন গুপ্তা এমপি ও ড. মো. সামসুল হক চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমান খালেদ, জাকের পার্টির মো. নজরুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক, জাতীয় পার্টির অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল কবীর ইমন, স্বতন্ত্র মো. মোবারক হোসেন, জাসদের আবু তাহের মো. রুহুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোহাম্মদ দিলোয়ার।
সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে। এ আসনে এ পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিবুর রহমান মানিকএমপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. আশরাফ হোসেন, জাকের পার্টির শেখ ইয়াকুব আলী, গণফোরামের আইয়ুব করম আলী, স্বতন্ত্র মো. আবু লেইস, রুহুল আমিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আবু সালেহ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আজিজুল হক, জাতীয় পার্টির মো. নাজমুল হুদা ও স্বতন্ত্র থেকে শামীম আহমদ চৌধুরী ও আইয়ুব করম আলী।
জেলার ৫ আসনের ৩৩ প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো. জাহানুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জয়া সেন গুপ্তা এমপি। রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ইফতিসাম প্রীতি জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সুনামগঞ্জের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেওয়ায় ওই আসনগুলোতে ভোট উৎসব জমে ওঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আসন দুটি হচ্ছে, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) এবং সুনামগঞ্জ-৪ (সদর—বিশ্বম্ভরপুর) আসন।
হাওর ঘেরা ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনটি জেলার সবচেয়ে বড় নির্বাচনী এলাকা। ৫টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ওখানে।মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৫ জন।প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই আসনে এমপি হবার আকাংখ্যা অনেকেরই আছে। ভারতের মেঘালয়ে লাগোয়া এই আসনে তিনটি স্থলবন্দর এবং একটি সীমান্ত হাটও আছে। বিখ্যাত টাঙ্গুয়া, শনি, মাটিয়ান ও পাগনার হাওর এই নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। ওখানকার বালু-পাথর মহাল কিংবা জলমহাল শাসন করতে পারলে, বছরে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় এমন কথা শুনা যায় এই অঞ্চলে। এজন্য এই আসনটির দিকে নজর সবার। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবার দলের মনোনয়ন পাননি। হঠাৎ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকেই নানান ইস্যুতে আলোচিত-সমালোচিত তিনি। দলীয় মনোনয়নে তিন তিনবার এমপি হয়েছেন তিনি। লাগাতার তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি বলে অভিমত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের।
দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নির্বাচনী এলাকার তাহিরপুর উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রঞ্জিত সরকার। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সিলেট সরকারী কলেজ শাখা ছাত্র লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ১৯৯২ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ১৯৯৭ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০০৩ সালে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, ২০০৭ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন।
১৯৮৯ সালে স্বৈরচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলায় দীর্ঘ ০১ বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ সালে বেগম জিয়া সরকারের সময় একই ভাবে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে তাকে গ্রেফতার পুলিশ। সে সময় তাকে কারাবরণ করতে হয় দীর্ঘ ০৭ মাস। এ সময় দুইটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় চোখ প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় ভারতের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা করে চোখের জ্যোতি ফিরে পান তিনি। ২০০১ সালে জামাত-বিএনপি জোট সরকার গঠন করার পর, "অপারেশন ক্লিন হার্ট" নামক আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের দমনের যে মিশন জামাত-বিএনপি জোট সরকার শুরু করেছিলো, তখন তাকে গ্রেফতার করা হয় স্বপরিবারে। পুরো ফ্যামিলির উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সিলেটের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা বিরল! পুরো পরিবারের বয়স্ক, নারী, শিশু সবাইকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের নজির আর ২য়টি নাই। এই মামলায় দীর্ঘ ০৬ মাস জেলে ছিলেন তিনি।২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় সিলেট গুলশান কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। তখন ইব্রাহিম নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতা মারা যান। সেই মামলায় সিলেট আদালত চত্তর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। সেই মামলায় ১৭ দিন রিমান্ডে রাখা হয় তাকে এবং চালানো হয় অত্যাচারের স্টিম রোলার। এ সময় তিনি জেলে ছিলেন ০৪ মাস।
রবিবার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রঞ্জিতের নাম ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকাজুড়ে আনন্দ মিছিল করেছে তাঁর সমর্থকরা। রতন সমর্থকদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা । সন্ধ্যায় মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন।
মোয়াজ্জমা হোসেন রতন জানান, ‘আমি ১৫ বছর এই নির্বাচনী এলাকার এমপি ছিলাম। আমি এখানকার মানুষের কাছে ঋণি। দলীয় নেতা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেব।
এই আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী তাহিরপুরের বাসিন্দা জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদও নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘সমর্থকদের অনেক চাপ আছে, এজন্য মনোনয়ন নিয়েছি। জমা দেব।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানুও নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন কিনেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ—৪ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬ জন। গেল দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ এই আসনে এমপি ছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক এঁর নাম ঘোষণা করায় নির্বাচনী এলাকার বিশ্বম্ভরপুর, মঙ্গলকাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে।
এখানে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান নির্বাচন করবেন বলে তার অনুসারীদের জানিয়ে দিয়েছেন।
মতিউর রহমান জানান, কর্মী সমর্থকরা মনোনয়ন ফরম কিনেছে, তাদের চাপেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনও মনোনয়ন কিনেছেন।
তিনি জানান, তৃণমূলে অসন্তোষ আছে। তাদের চাপে মনোনয়ন জমা দিতে হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়েই যা করার করবো। এছাড়া এই আসনে মনোনয়ন জমা দেবেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন। তিনিও সোমবার মনোনয়ন কিনেছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঋতেশ রঞ্জন দেব, গণতন্ত্রী পার্টির মিহির রঞ্জন দাস, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান, ড. জয়া সেন গুপ্তা এমপি ও ড. মো. সামসুল হক চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমান খালেদ, জাকের পার্টির মো. নজরুল ইসলাম।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. মোহাম্মদ সাদিক, জাতীয় পার্টির অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল কবীর ইমন, স্বতন্ত্র মো. মোবারক হোসেন, জাসদের আবু তাহের মো. রুহুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মোহাম্মদ দিলোয়ার।
সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে। এ আসনে এ পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এরমধ্যে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিবুর রহমান মানিকএমপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. আশরাফ হোসেন, জাকের পার্টির শেখ ইয়াকুব আলী, গণফোরামের আইয়ুব করম আলী, স্বতন্ত্র মো. আবু লেইস, রুহুল আমিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আবু সালেহ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আজিজুল হক, জাতীয় পার্টির মো. নাজমুল হুদা ও স্বতন্ত্র থেকে শামীম আহমদ চৌধুরী ও আইয়ুব করম আলী।
জেলার ৫ আসনের ৩৩ প্রার্থীর মধ্যে মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মো. জাহানুর রশিদ এবং সুনামগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. জয়া সেন গুপ্তা এমপি। রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ইফতিসাম প্রীতি জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।
সুনামগঞ্জের দুটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেওয়ায় ওই আসনগুলোতে ভোট উৎসব জমে ওঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। আসন দুটি হচ্ছে, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর) এবং সুনামগঞ্জ-৪ (সদর—বিশ্বম্ভরপুর) আসন।
হাওর ঘেরা ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনটি জেলার সবচেয়ে বড় নির্বাচনী এলাকা। ৫টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ওখানে।মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৫ জন।প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই আসনে এমপি হবার আকাংখ্যা অনেকেরই আছে। ভারতের মেঘালয়ে লাগোয়া এই আসনে তিনটি স্থলবন্দর এবং একটি সীমান্ত হাটও আছে। বিখ্যাত টাঙ্গুয়া, শনি, মাটিয়ান ও পাগনার হাওর এই নির্বাচনী এলাকায় পড়েছে। ওখানকার বালু-পাথর মহাল কিংবা জলমহাল শাসন করতে পারলে, বছরে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া যায় এমন কথা শুনা যায় এই অঞ্চলে। এজন্য এই আসনটির দিকে নজর সবার। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবার দলের মনোনয়ন পাননি। হঠাৎ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর থেকেই নানান ইস্যুতে আলোচিত-সমালোচিত তিনি। দলীয় মনোনয়নে তিন তিনবার এমপি হয়েছেন তিনি। লাগাতার তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু থাকার কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি বলে অভিমত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের।
দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নির্বাচনী এলাকার তাহিরপুর উপজেলার নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. রঞ্জিত সরকার। স্কুল জীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে সিলেট সরকারী কলেজ শাখা ছাত্র লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ১৯৯২ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ১৯৯৭ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০০৩ সালে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, ২০০৭ সালে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন।
১৯৮৯ সালে স্বৈরচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সেই মামলায় দীর্ঘ ০১ বছর কারাগারে ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ এবং ১৯৯৫ সালে বেগম জিয়া সরকারের সময় একই ভাবে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে তাকে গ্রেফতার পুলিশ। সে সময় তাকে কারাবরণ করতে হয় দীর্ঘ ০৭ মাস। এ সময় দুইটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় চোখ প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় ভারতের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা করে চোখের জ্যোতি ফিরে পান তিনি। ২০০১ সালে জামাত-বিএনপি জোট সরকার গঠন করার পর, "অপারেশন ক্লিন হার্ট" নামক আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের দমনের যে মিশন জামাত-বিএনপি জোট সরকার শুরু করেছিলো, তখন তাকে গ্রেফতার করা হয় স্বপরিবারে। পুরো ফ্যামিলির উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। সিলেটের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা বিরল! পুরো পরিবারের বয়স্ক, নারী, শিশু সবাইকে গ্রেফতার করে নির্যাতনের নজির আর ২য়টি নাই। এই মামলায় দীর্ঘ ০৬ মাস জেলে ছিলেন তিনি।২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় সিলেট গুলশান কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের উপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। তখন ইব্রাহিম নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতা মারা যান। সেই মামলায় সিলেট আদালত চত্তর থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। সেই মামলায় ১৭ দিন রিমান্ডে রাখা হয় তাকে এবং চালানো হয় অত্যাচারের স্টিম রোলার। এ সময় তিনি জেলে ছিলেন ০৪ মাস।
রবিবার বিকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রঞ্জিতের নাম ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকাজুড়ে আনন্দ মিছিল করেছে তাঁর সমর্থকরা। রতন সমর্থকদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা । সন্ধ্যায় মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন।
মোয়াজ্জমা হোসেন রতন জানান, ‘আমি ১৫ বছর এই নির্বাচনী এলাকার এমপি ছিলাম। আমি এখানকার মানুষের কাছে ঋণি। দলীয় নেতা কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছি বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেব।
এই আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী তাহিরপুরের বাসিন্দা জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদও নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘সমর্থকদের অনেক চাপ আছে, এজন্য মনোনয়ন নিয়েছি। জমা দেব।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানুও নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়ন কিনেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ—৪ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৮৬ জন। গেল দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ এই আসনে এমপি ছিলেন। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক এঁর নাম ঘোষণা করায় নির্বাচনী এলাকার বিশ্বম্ভরপুর, মঙ্গলকাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল হয়েছে।
এখানে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান নির্বাচন করবেন বলে তার অনুসারীদের জানিয়ে দিয়েছেন।
মতিউর রহমান জানান, কর্মী সমর্থকরা মনোনয়ন ফরম কিনেছে, তাদের চাপেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে হবে। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনও মনোনয়ন কিনেছেন।
তিনি জানান, তৃণমূলে অসন্তোষ আছে। তাদের চাপে মনোনয়ন জমা দিতে হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নিয়েই যা করার করবো। এছাড়া এই আসনে মনোনয়ন জমা দেবেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন। তিনিও সোমবার মনোনয়ন কিনেছেন।