প্রতি মাসে যে পরিমাণ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়, তার সঠিক হিসাব মূসক বা ভ্যাট রিটার্নে দেখানো হয় না। কোনো মাসে পৌনে ৬৮ লাখ টাকা, কোনো মাসে সাড়ে ছয় কোটি টাকা পর্যন্ত বিক্রি কম দেখানো হয়েছে। এভাবে এক-দুই মাস নয়; আট মাসের মূসক রিটার্নে অন্তত পৌনে ২২ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করা হয়েছে। মূলত ভ্যাট ফাঁকি দিতেই এই বিক্রয় তথ্য গোপন করে আসছে চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড রিয়েলমি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মূসক গোয়েন্দার অভিযানে বিক্রয় তথ্য গোপন ও ভ্যাট ফাঁকি বেরিয়ে এসেছে। বিক্রয় তথ্য গোপন ও ভ্যাট ফাঁকি স্বীকার করেছে বাংলাদেশে রিয়েলমি’র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, রিয়েলমি হলো চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি বিবিকে ইলেকট্রনিকসের একটি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড, যার প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে। বাংলাদেশের গাজীপুরে প্রতিষ্ঠানটি কারখানা নির্মাণ করেছে, যেখানে তিনটি সারিতে স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে রিয়েলমি। এদেশের বাজারে ব্র্যান্ডটি ২৫৮ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া রিয়েলমি সারা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে দশ কোটি স্মার্টফোন বিক্রির মাইলফলক অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রিয়েলমি বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম স্মার্টফোন ব্র্যান্ড, বিশ্বের ৬১টি বাজারে এর উপস্থিতি রয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, দেশে রিয়েলমির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফোন বিক্রির সঠিক হিসাব মূসক রিটার্নে না দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে গোপন তথ্য পায় মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। বিষয়টি যাচাইয়ে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল চলতি বছরের ১২ মার্চ পুলিশ প্লাজা কনকর্ড টাওয়ারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রিয়েলমির মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন, বিক্রি ও মূসক সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন। এতে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে ভ্যাট ফাঁকির আলামত পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ডেটাবেজ থেকে মাসভিত্তিক মোবাইল ফোন সেট বিক্রির তথ্য প্রিন্ট করে জব্দ করে নেন কর্মকর্তা। জব্দ করা কাগজপত্র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের মাসিক মূসক রিটার্নের সঙ্গে আড়াআড়ি যাচাই ও পর্যালোচনা করে ব্যাপক গরমিল দেখতে পায়। বিশেষ করে ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসের বিক্রয় তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
জব্দ করা দলিলাদি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফোন বিক্রয় করেছে ১৩২ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ১২ টাকা (ভ্যাটসহ)। কিন্তু ভ্যাট অফিসে জমা দেয়া মাসিক রিটার্নে (দাখিলপত্র) বিক্রয় দেখানো হয়েছে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৬ টাকা (ভ্যাটসহ)। কেবল জুলাইয়ে বিক্রয় গোপন করেছে চার কোটি ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৬ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় তিন কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য ভ্যাট ২১ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ টাকা। একইভাবে আগস্টে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রয় ১১৫ কোটি ৭০ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৮ টাকা। কিন্তু মূসক রিটার্নে দেখানো হয়েছে ১০৯ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার ৬৩০ টাকা। বিক্রয় কম দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৮ টাকা। যাতে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় ৬ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৯৩ টাকা। যার ওপর সুদসহ ভ্যাট ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টাকা।
আরও দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে রিয়েলমির এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ৮৮৪ টাকা। কিন্তু রিটার্নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৮ টাকা বিক্রি কম দেখানো হয়েছে। যাতে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৩ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৩২২ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য ভ্যাট ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৬ টাকা। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ৪ হাজার ৫০৩ টাকা। কিন্তু রিটার্নে ৬৮ লাখ ১০ হাজার ২২৬ টাকা বিক্রি কম দেখানো হয়েছে। যাতে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩০ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫১১ টাকা। নভেম্বরে প্রকৃত বিক্রি ১০৯ কোটি ৯৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৫ টাকা। কিন্তু রিটার্নে বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৪ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭৫ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ১৭ লাখ ৬ হাজার ৬৭ টাকা। ডিসেম্বরে প্রকৃত বিক্রি ৯৭ কোটি ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯২ টাকা। রিটার্নে কম দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৬ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৩৩০ টাকা। যার ওপর সুদসহ মূসক ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯২৩ টাকা।
পর্যালোচনা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রয় ১১৬ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। রিটার্নে কম দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৫৯৮ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৫৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪১ টাকা। যার ওপর সুদসহ মূসক ২ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি হয়েছে ১০৪ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ টাকা। কিন্তু ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৯১ লাখ ২০ হাজার ৭৫৬ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ৪ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৮ টাকা। অর্থাৎ মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রিয়েলমির এ প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে ৮৯৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৫ টাকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠান মাসিক ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি দেখিয়েছে ৮৭২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৯২৫ টাকা। আট মাসে প্রতিষ্ঠান বিক্রয় গোপন করেছে ২২ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪২০ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় ছিল ২১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ১৯ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক এক কোটি ১১ লাখ ১৬ হাজার ২৪ টাকা।
এনবিআর সূত্রমতে, রিয়েলমির এ প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও যাচাই করে ফাঁকি দেয়া এ মূসকের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ভ্যাট গোয়েন্দা চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়। ৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠির মাধ্যমে ভ্যাট গোয়েন্দাকে জানানো হয়েছে, উদঘাটিত এ মূসক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা করবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্নে প্রকৃত বিক্রির তথ্য গোপন করে মূসক ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান বলেছে, উদ্ঘাটিত রাজস্ব পরিহারের বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ও অনেকটা অজ্ঞতাবশত। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আরও যত্নশীল হবে বলে অঙ্গীকার করে। পরে ফাঁকি দেয়া এই মূসক সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে রিয়েলমির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। ফাঁকি দেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ায় ভ্যাট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটকে প্রতিবেদন দিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান বিক্রয় গোপন করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। মূসক আইন হলো, বিক্রয় গোপন করলে শাস্তি ও জরিমানা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিয়েলমির জনসংযোগ (পিআর) কর্মকর্তা সহকারী ব্যবস্থাপক শাহেদ মোরশেদ জায়গিরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে রিয়েলমির বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া বক্তব্যের জন্য রিয়েলমির পিআর প্রতিষ্ঠান ব্লাকবোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাও কোনো বক্তব্য দেয়নি।
সূত্রমতে, রিয়েলমি হলো চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানি বিবিকে ইলেকট্রনিকসের একটি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড, যার প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে। বাংলাদেশের গাজীপুরে প্রতিষ্ঠানটি কারখানা নির্মাণ করেছে, যেখানে তিনটি সারিতে স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে রিয়েলমি। এদেশের বাজারে ব্র্যান্ডটি ২৫৮ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া রিয়েলমি সারা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে দশ কোটি স্মার্টফোন বিক্রির মাইলফলক অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রিয়েলমি বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম স্মার্টফোন ব্র্যান্ড, বিশ্বের ৬১টি বাজারে এর উপস্থিতি রয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, দেশে রিয়েলমির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফোন বিক্রির সঠিক হিসাব মূসক রিটার্নে না দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে গোপন তথ্য পায় মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা)। বিষয়টি যাচাইয়ে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল চলতি বছরের ১২ মার্চ পুলিশ প্লাজা কনকর্ড টাওয়ারে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রিয়েলমির মোবাইল ফোন সেট উৎপাদন, বিক্রি ও মূসক সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন। এতে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে ভ্যাট ফাঁকির আলামত পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ডেটাবেজ থেকে মাসভিত্তিক মোবাইল ফোন সেট বিক্রির তথ্য প্রিন্ট করে জব্দ করে নেন কর্মকর্তা। জব্দ করা কাগজপত্র গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের মাসিক মূসক রিটার্নের সঙ্গে আড়াআড়ি যাচাই ও পর্যালোচনা করে ব্যাপক গরমিল দেখতে পায়। বিশেষ করে ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসের বিক্রয় তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
জব্দ করা দলিলাদি অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফোন বিক্রয় করেছে ১৩২ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ১২ টাকা (ভ্যাটসহ)। কিন্তু ভ্যাট অফিসে জমা দেয়া মাসিক রিটার্নে (দাখিলপত্র) বিক্রয় দেখানো হয়েছে ১২৮ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৬ টাকা (ভ্যাটসহ)। কেবল জুলাইয়ে বিক্রয় গোপন করেছে চার কোটি ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৩১৬ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় তিন কোটি ৯২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য ভ্যাট ২১ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ টাকা। একইভাবে আগস্টে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রয় ১১৫ কোটি ৭০ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৮ টাকা। কিন্তু মূসক রিটার্নে দেখানো হয়েছে ১০৯ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার ৬৩০ টাকা। বিক্রয় কম দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৮ টাকা। যাতে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় ৬ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৯৩ টাকা। যার ওপর সুদসহ ভ্যাট ৩৩ লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টাকা।
আরও দেখা গেছে, সেপ্টেম্বরে রিয়েলমির এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ৮৮৪ টাকা। কিন্তু রিটার্নে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৮ টাকা বিক্রি কম দেখানো হয়েছে। যাতে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৩ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৩২২ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য ভ্যাট ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯০৬ টাকা। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ৪ হাজার ৫০৩ টাকা। কিন্তু রিটার্নে ৬৮ লাখ ১০ হাজার ২২৬ টাকা বিক্রি কম দেখানো হয়েছে। যাতে মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩০ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫১১ টাকা। নভেম্বরে প্রকৃত বিক্রি ১০৯ কোটি ৯৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৫ টাকা। কিন্তু রিটার্নে বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৪ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার ৯৭৫ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ১৭ লাখ ৬ হাজার ৬৭ টাকা। ডিসেম্বরে প্রকৃত বিক্রি ৯৭ কোটি ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯২ টাকা। রিটার্নে কম দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৬ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৩৩০ টাকা। যার ওপর সুদসহ মূসক ১২ লাখ ২৫ হাজার ৯২৩ টাকা।
পর্যালোচনা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রয় ১১৬ কোটি ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। রিটার্নে কম দেখানো হয়েছে ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৫৯৮ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৫৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪১ টাকা। যার ওপর সুদসহ মূসক ২ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি হয়েছে ১০৪ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ টাকা। কিন্তু ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি কম দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৯৪ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রি ৯১ লাখ ২০ হাজার ৭৫৬ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক ৪ লাখ ৬০ হাজার ৫৯৮ টাকা। অর্থাৎ মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রিয়েলমির এ প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে ৮৯৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৫ টাকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠান মাসিক ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি দেখিয়েছে ৮৭২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৯২৫ টাকা। আট মাসে প্রতিষ্ঠান বিক্রয় গোপন করেছে ২২ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪২০ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয় ছিল ২১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ১৯ টাকা। যার ওপর সুদসহ প্রযোজ্য মূসক এক কোটি ১১ লাখ ১৬ হাজার ২৪ টাকা।
এনবিআর সূত্রমতে, রিয়েলমির এ প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পর্যালোচনা ও যাচাই করে ফাঁকি দেয়া এ মূসকের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ভ্যাট গোয়েন্দা চলতি বছরের ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়। ৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠির মাধ্যমে ভ্যাট গোয়েন্দাকে জানানো হয়েছে, উদঘাটিত এ মূসক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা করবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্নে প্রকৃত বিক্রির তথ্য গোপন করে মূসক ফাঁকির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান বলেছে, উদ্ঘাটিত রাজস্ব পরিহারের বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ও অনেকটা অজ্ঞতাবশত। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আরও যত্নশীল হবে বলে অঙ্গীকার করে। পরে ফাঁকি দেয়া এই মূসক সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে রিয়েলমির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। ফাঁকি দেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ায় ভ্যাট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটকে প্রতিবেদন দিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান বিক্রয় গোপন করার বিষয়টি স্বীকার করেছে। মূসক আইন হলো, বিক্রয় গোপন করলে শাস্তি ও জরিমানা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিয়েলমির জনসংযোগ (পিআর) কর্মকর্তা সহকারী ব্যবস্থাপক শাহেদ মোরশেদ জায়গিরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে রিয়েলমির বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া বক্তব্যের জন্য রিয়েলমির পিআর প্রতিষ্ঠান ব্লাকবোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাও কোনো বক্তব্য দেয়নি।