এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রথম মাসে নেওয়া নানান উদ্যোগ ও আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনাসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। এদিকে ডয়চে ভেলে: আপনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর একমাস পূর্ণ হলো। গত কয়েক সপ্তাহে কোন কোন বিষয়কে আপনি অগ্রাধিকার দিয়েছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমার তো অগ্রাধিকার দেবার কথা না। অগ্রাধিকারগুলো সামনে এসে গেছে। আমি বাছাই করার সুযোগও পাইনি। শান্তি-শৃঙ্খলা হলো সবার প্রথমে। যেহেতু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা আসছি, সরকার গঠন করেছি, কাজেই প্রথম দায়িত্ব হলো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। এরকম বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে হয় নাই। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ এগিয়ে এসেছে। এমন কোনো লোক ছিল না যে এটাতে শরিক মনে করে নাই। জনমত নির্বিশেষে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। আমরা একটা বিরাট দায়িত্ব নিয়ে আসছি। এদিকে হলো বিপ্লব আর এদিকে স্বপ্ন। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অর্থনীতি একটা বিশৃঙ্খল, ভঙ্গুর অর্থনীতি হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ। সব কিছু লুটপাট। এটা লুটের একটা সরকার ছিল। কাজেই সেই লুটের সরকার থেকে সত্যিকার সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা- এটাও মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা। এবং এটা দ্রুত দেখতে চায়। সেগুলো আমাদের করার চেষ্টা। এক মাসের মধ্যে আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি।
ডয়চে ভেলে: রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখনের দাবিও উঠেছে। বলা হচ্ছে সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কিনা জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে। তো সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে- সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, নাকি এই সংবিধানই কিছু সংশোধন করা হবে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এইজন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর উপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে- সবকিছুই সংবিধানের ভিতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেইম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েকবছর ধরেই নানা রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার এই সংকটকে তীব্র করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা আন্দোলনেও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা এবং অর্থনীতিকে পুনরায় সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে কী কী বাধা দেখছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: লুটপাটের একটা অর্থনীতি। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল নিজের টাকা -পয়সা করার আগ্রহ। ৬০ হাজার কোটি টাকা শুধু ছাপানো হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য। কিন্তু মানুষের যে মূল্যস্ফীতি হবে- এটার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কোনো জিনিস ছিল না। এগুলো সমস্ত কিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে করতে হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, সামনে নিয়ে যেতে হলে করতে হবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভিত্তিটা করতে হবে। কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবটা পেরে গেছি তা না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব আছে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশাল বিশাল অংকের ঋণ নেওয়া হয়েছে,সেগুলো শোধ করার পালা এসেছে আমাদের উপরে। উনারা নিয়ে গেছেন, ভোগ দখল করেছেন। এখন টাকাটা জনগণকে শোধ করতে হবে। সেই পরিশোধের টাকা কোথা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে এই চিন্তা আমাদের বড় চিন্তা। আমরা পৃথিবীর সামনে এমন একটা রাষ্ট্র হতে চাই না যে তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে না। আমরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে চাই। অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপরে দাঁড় করাতে চাই, যেন ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি না হয়।
ডয়চে ভেলে: ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিক অধিকার, মানুষের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার, পুলিশের সেবা পাওয়ার অধিকার এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি বলে নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। অনেক লোক পালিয়ে গেছে, যারা জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল। অথবা যারা আছে, তাদের সহকর্মীরা তাদের উপর ভয়ানক বিক্ষুব্ধ। বিক্ষোভের মুখে তারা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কাজেই এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রশাসনে এই শূন্যতা পূরণ আবার মুশকিল। এরে দিলেন ওরে কেন দিলেন না ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে । তো এর মধ্য থেকেই আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি, দেখো, আমদের বিবেচনায় যেটা সঠিক সেটাই আমরা করছি। আমরা করি একটা, আমদের উপর আস্থা রাখেন। বহু পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। সব ভিসিই চলে গেছেন। ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রোভিসি দিতে হচ্ছে। এবং এই নিয়োগে সবাই খুশি। আবার নতুন করে বিচার ব্যবস্থা চালু হবে। অনেকগুলো পরিবর্তন আমাদের একসঙ্গে করতে হচ্ছে। অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে আপনার সরকারের তরফ থেকে এখন অবধি নেওয়া পদক্ষেপে আপনি কি সন্তুষ্ট?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসে নাই তো। আমাদের প্রথম দৃষ্টি হচ্ছে তালিকা করা, যেটার কথা আপনি বললেন। আমরা প্রত্যেকের তথ্য নিয়ে ড্যাটাবেজ তৈরি করছি। আমাদের ভয় হলো, আমরা যদি এটা না করি কিছুদিনের মধ্যে ভুয়া শহিদ ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে। কাজেই এটা থেকে আমরা বাঁচতে চাই। আমরা ওয়াদা করেছি, প্রত্যেকটা শহিদ পরিবারের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করবো। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গ্রহণ করবো। কাজেই এটার সংখ্যা নির্দিষ্ট হয়ে যেতে হবে। যেন এক বছর পরে কেউ এসে না বলতে পারে যে, আমার পরিবার শহীদের পরিবার। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি। আমরা একটা ফাউন্ডেশন করেছি। একটা স্থায়ী ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার জন্য। যারা বেঁচে আছে তাদেরকে মিলিয়ে আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকারের সময় বেশ কয়েকবার শোনা গেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়ও এ ধরনের হামলা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু মহাজোট নামের দুটো সংগঠন। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাজপথে নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও দেখা গেছে গত কয়েক সপ্তাহে। এক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা না। সব দেশেই সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা হয়। আমেরিকাতেও সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা আছে। সরকারের দায়িত্ব এটা না হওয়া। সংবিধানের অধিকার সবার প্রাপ্য। আমরা তো হিন্দুর প্রাপ্য, মুসলমানের প্রাপ্য কি বৌদ্ধর প্রাপ্য এরকম করে ভাগ করে দেই নাই। সরকারের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা। এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা হলেই আর ধর্মীয় বিভাজনের প্রশ্ন উঠবে না। যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আমি বলবো যে, যেই পরিমাণ প্রচার হচ্ছে সেই পরিমাণ আমাদের দৃষ্টিতে আসছে না। আমরা বারে বারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে না যে অত বড় কিছু আসলে হচ্ছে। অনেকে এটা রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছে। যেটুকু হচ্ছে সেটা যেন না হয়, শূন্যের কোঠায় পৌঁছায় সেদিকে আমরা যাবো।
ডয়চে ভেলে: ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী এবং দুটো দেশ নানাভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ‘ভারতের শক্তিশালী মিত্র’ হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিচ্ছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী বলা যায়। কারণ, চারদিক থেকেই ভারত আমাদের আছে । কাজেই তার সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক হওয়া উচিত এবং হবে। এ ছাড়া আমদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই। দুই দেশের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক রেখে কেউ লাভবান হবে না। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা হবে সবচেয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। বন্ধুত্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া- এটাই আমাদের উদ্যোগ। পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন আছে। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধ নিরসনে দুই দেশ আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিলেই সেটার সমাধান হবে। সার্ক একটা পরিবারের মতো ছিল। আমরা সেই কাঠামোতে ফিরে যেতে পারি কিনা দেখবো। শুধু ভারতের সাথে না, দক্ষিণ এশিয়ায় যত দেশ আছে সবাই যেন পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখে। শান্তিপূর্ণ জোন হিসেবে আমরা একে গড়তে চাই। বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সার্ক ও বিমসটেক-কে সক্রিয় করার করার চেষ্টা করবো।
ডয়চে ভেলে: বিগত সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগপন্থিদের প্রাধান্য দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি এই অভিযোগটিও উঠতে শুরু করেছে যে কিছু পদে নতুন যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কোনো কোনোক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিতরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা উল্টোভাবে দেখতে পারেন। যেহেতু উনি সিভিল সার্ভিসে আছেন, উনি একটা পোস্টিং পাবেন। দল ছাড়া কেউ কিছু এখানে করতে পারতো না। আমাদের চেষ্টা করতে হবে দল যেন না আসে। এ দলেও নাই , ওই দলেও নাই এমন কাউকে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনভাবে চলতে হবে যেন দলটা যেন ভারী না হয়ে যায়। আমাদের যেহেতু নিজেদের দল নাই, আমরা নির্দলীয়ভাবে দেখতে পারি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে? সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এটা না হলে তো এই সরকারের অর্থই হবে না। নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হিসেবে যেন গৃহীত হয়। তাহলে মনে করবো যে, আমাদের এই সময়টা সার্থক হয়েছে। সেটার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি লাগে, আইন লাগে। সংবিধান হলে নির্বাচনী আইন, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তাদের মতামত পাবো। এই সরকারের বড় জিনিস হলো সংস্কার। এই সংস্কারটা সম্পন্ন করতে হবে। এই সুযোগ আর জীবনে ফিরে আসবে না। আমাদের সব কিছু কলাপ্স করে গেল- এমন যেন না হয়। হঠাৎ করেই সবকিছু জিরোতে গিয়ে পৌছবে না। পুরাতন বাংলাদেশ ইতি। এটা নতুন বাংলাদেশ, আমরা নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জেগে উঠব।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমার তো অগ্রাধিকার দেবার কথা না। অগ্রাধিকারগুলো সামনে এসে গেছে। আমি বাছাই করার সুযোগও পাইনি। শান্তি-শৃঙ্খলা হলো সবার প্রথমে। যেহেতু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা আসছি, সরকার গঠন করেছি, কাজেই প্রথম দায়িত্ব হলো শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এটার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে। এরকম বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে হয় নাই। ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ জনগণ এগিয়ে এসেছে। এমন কোনো লোক ছিল না যে এটাতে শরিক মনে করে নাই। জনমত নির্বিশেষে এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। আমরা একটা বিরাট দায়িত্ব নিয়ে আসছি। এদিকে হলো বিপ্লব আর এদিকে স্বপ্ন। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো। মানুষের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অর্থনীতি একটা বিশৃঙ্খল, ভঙ্গুর অর্থনীতি হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে মানুষ এত বিক্ষুব্ধ। সব কিছু লুটপাট। এটা লুটের একটা সরকার ছিল। কাজেই সেই লুটের সরকার থেকে সত্যিকার সরকার, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা- এটাও মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা। এবং এটা দ্রুত দেখতে চায়। সেগুলো আমাদের করার চেষ্টা। এক মাসের মধ্যে আমাদের যতটুকু সম্ভব করেছি।
ডয়চে ভেলে: রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান পুনর্লিখনের দাবিও উঠেছে। বলা হচ্ছে সংবিধান পুনর্লিখন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা মস্ত বড় সুযোগ। এই সুযোগ জাতির জীবনে আর আসবে কিনা জানি না। না আসাটাই স্বাভাবিক হোক। গোড়াতে হাত দিতে হবে, সংবিধানে হাত দিতে হবে। তো সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে- সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে, নাকি এই সংবিধানই কিছু সংশোধন করা হবে? এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এইজন্য কমিশন হবে, বিচার বিবেচনা করবে, একমত হবে। এর উপর ভিত্তি করে নির্বাচন হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত তো আমরা নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করতে পারছি না। কী ধরনের নির্বাচন হবে, কী কী নির্বাচন হবে- সবকিছুই সংবিধানের ভিতরে থাকবে। পুরো আন্দোলনের ব্র্যান্ড নেইম হচ্ছে সংস্কার। সংস্কার হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা। আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার অংশীদার। আমরা দায়িত্ব নিয়েছি যেন আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পূরণ করতে পারি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েকবছর ধরেই নানা রকম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচার এই সংকটকে তীব্র করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা আন্দোলনেও রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা এবং অর্থনীতিকে পুনরায় সন্তোষজনক অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে কী কী বাধা দেখছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: লুটপাটের একটা অর্থনীতি। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল নিজের টাকা -পয়সা করার আগ্রহ। ৬০ হাজার কোটি টাকা শুধু ছাপানো হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য। কিন্তু মানুষের যে মূল্যস্ফীতি হবে- এটার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ ছিল না। ব্যাংকিং সিস্টেম পুরোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলতে কোনো জিনিস ছিল না। এগুলো সমস্ত কিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। সব কিছু নতুন করে করতে হচ্ছে। দেশকে বাঁচাতে হলে, সামনে নিয়ে যেতে হলে করতে হবে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ভিত্তিটা করতে হবে। কিছুটা শৃঙ্খলা এসেছে। সবটা পেরে গেছি তা না। বৈদেশিক মুদ্রার অভাব আছে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিশাল বিশাল অংকের ঋণ নেওয়া হয়েছে,সেগুলো শোধ করার পালা এসেছে আমাদের উপরে। উনারা নিয়ে গেছেন, ভোগ দখল করেছেন। এখন টাকাটা জনগণকে শোধ করতে হবে। সেই পরিশোধের টাকা কোথা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে এই চিন্তা আমাদের বড় চিন্তা। আমরা পৃথিবীর সামনে এমন একটা রাষ্ট্র হতে চাই না যে তার অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে না। আমরা অঙ্গীকার রক্ষা করতে চাই। অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির উপরে দাঁড় করাতে চাই, যেন ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি না হয়।
ডয়চে ভেলে: ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সুশাসনের বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে নাগরিক অধিকার, মানুষের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার, পুলিশের সেবা পাওয়ার অধিকার এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি বলে নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: চেষ্টা করছি আমরা, কিন্তু পুরোপুরি হয়নি। অনেক লোক পালিয়ে গেছে, যারা জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছিল। অথবা যারা আছে, তাদের সহকর্মীরা তাদের উপর ভয়ানক বিক্ষুব্ধ। বিক্ষোভের মুখে তারা পদত্যাগ করে চলে গেছেন। কাজেই এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রশাসনে এই শূন্যতা পূরণ আবার মুশকিল। এরে দিলেন ওরে কেন দিলেন না ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন উঠছে । তো এর মধ্য থেকেই আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি, দেখো, আমদের বিবেচনায় যেটা সঠিক সেটাই আমরা করছি। আমরা করি একটা, আমদের উপর আস্থা রাখেন। বহু পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হয়েছে। সব ভিসিই চলে গেছেন। ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে প্রোভিসি দিতে হচ্ছে। এবং এই নিয়োগে সবাই খুশি। আবার নতুন করে বিচার ব্যবস্থা চালু হবে। অনেকগুলো পরিবর্তন আমাদের একসঙ্গে করতে হচ্ছে। অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারে আপনার সরকারের তরফ থেকে এখন অবধি নেওয়া পদক্ষেপে আপনি কি সন্তুষ্ট?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: না, এখনো সন্তুষ্ট হওয়ার সময় আসে নাই তো। আমাদের প্রথম দৃষ্টি হচ্ছে তালিকা করা, যেটার কথা আপনি বললেন। আমরা প্রত্যেকের তথ্য নিয়ে ড্যাটাবেজ তৈরি করছি। আমাদের ভয় হলো, আমরা যদি এটা না করি কিছুদিনের মধ্যে ভুয়া শহিদ ইত্যাদি শুরু হয়ে যাবে। কাজেই এটা থেকে আমরা বাঁচতে চাই। আমরা ওয়াদা করেছি, প্রত্যেকটা শহিদ পরিবারের দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করবো। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গ্রহণ করবো। কাজেই এটার সংখ্যা নির্দিষ্ট হয়ে যেতে হবে। যেন এক বছর পরে কেউ এসে না বলতে পারে যে, আমার পরিবার শহীদের পরিবার। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি। আমরা একটা ফাউন্ডেশন করেছি। একটা স্থায়ী ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার জন্য। যারা বেঁচে আছে তাদেরকে মিলিয়ে আমরা কর্মসূচি নিচ্ছি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকারের সময় বেশ কয়েকবার শোনা গেছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সময়ও এ ধরনের হামলা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও হিন্দু মহাজোট নামের দুটো সংগঠন। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের দাবিতে রাজপথে নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও দেখা গেছে গত কয়েক সপ্তাহে। এক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধান কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা না। সব দেশেই সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা হয়। আমেরিকাতেও সংখ্যালঘু নিয়ে সমস্যা আছে। সরকারের দায়িত্ব এটা না হওয়া। সংবিধানের অধিকার সবার প্রাপ্য। আমরা তো হিন্দুর প্রাপ্য, মুসলমানের প্রাপ্য কি বৌদ্ধর প্রাপ্য এরকম করে ভাগ করে দেই নাই। সরকারের দায়িত্ব হলো এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করা। এই অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা হলেই আর ধর্মীয় বিভাজনের প্রশ্ন উঠবে না। যতদিন প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততদিন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তবে আমি বলবো যে, যেই পরিমাণ প্রচার হচ্ছে সেই পরিমাণ আমাদের দৃষ্টিতে আসছে না। আমরা বারে বারে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কিন্তু মনে হচ্ছে না যে অত বড় কিছু আসলে হচ্ছে। অনেকে এটা রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করছে। যেটুকু হচ্ছে সেটা যেন না হয়, শূন্যের কোঠায় পৌঁছায় সেদিকে আমরা যাবো।
ডয়চে ভেলে: ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী এবং দুটো দেশ নানাভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ‘ভারতের শক্তিশালী মিত্র’ হিসেবে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিচ্ছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: ভারত আমাদের প্রতিবেশী এবং আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী বলা যায়। কারণ, চারদিক থেকেই ভারত আমাদের আছে । কাজেই তার সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক হওয়া উচিত এবং হবে। এ ছাড়া আমদের গত্যন্তর নাই, তাদেরও গত্যন্তর নাই। দুই দেশের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক রেখে কেউ লাভবান হবে না। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা হবে সবচেয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। বন্ধুত্বের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া- এটাই আমাদের উদ্যোগ। পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন আছে। দুই দেশের মধ্যকার চলমান বিরোধ নিরসনে দুই দেশ আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিলেই সেটার সমাধান হবে। সার্ক একটা পরিবারের মতো ছিল। আমরা সেই কাঠামোতে ফিরে যেতে পারি কিনা দেখবো। শুধু ভারতের সাথে না, দক্ষিণ এশিয়ায় যত দেশ আছে সবাই যেন পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখে। শান্তিপূর্ণ জোন হিসেবে আমরা একে গড়তে চাই। বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে সার্ক ও বিমসটেক-কে সক্রিয় করার করার চেষ্টা করবো।
ডয়চে ভেলে: বিগত সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগপন্থিদের প্রাধান্য দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। আপনার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি এই অভিযোগটিও উঠতে শুরু করেছে যে কিছু পদে নতুন যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কোনো কোনোক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিতরা প্রাধান্য পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: এটা উল্টোভাবে দেখতে পারেন। যেহেতু উনি সিভিল সার্ভিসে আছেন, উনি একটা পোস্টিং পাবেন। দল ছাড়া কেউ কিছু এখানে করতে পারতো না। আমাদের চেষ্টা করতে হবে দল যেন না আসে। এ দলেও নাই , ওই দলেও নাই এমন কাউকে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনভাবে চলতে হবে যেন দলটা যেন ভারী না হয়ে যায়। আমাদের যেহেতু নিজেদের দল নাই, আমরা নির্দলীয়ভাবে দেখতে পারি।
ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে পারে? সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
ড. মুহাম্মদ ইউনূস: আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এটা না হলে তো এই সরকারের অর্থই হবে না। নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হিসেবে যেন গৃহীত হয়। তাহলে মনে করবো যে, আমাদের এই সময়টা সার্থক হয়েছে। সেটার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি লাগে, আইন লাগে। সংবিধান হলে নির্বাচনী আইন, নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। তাদের মতামত পাবো। এই সরকারের বড় জিনিস হলো সংস্কার। এই সংস্কারটা সম্পন্ন করতে হবে। এই সুযোগ আর জীবনে ফিরে আসবে না। আমাদের সব কিছু কলাপ্স করে গেল- এমন যেন না হয়। হঠাৎ করেই সবকিছু জিরোতে গিয়ে পৌছবে না। পুরাতন বাংলাদেশ ইতি। এটা নতুন বাংলাদেশ, আমরা নতুন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে জেগে উঠব।