গতকাল এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল রোববার (১২ মে) ফল প্রকাশের পর সারাদেশে ৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালী, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মাগুরা জেলায় এসব ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনায় আরও ৩ শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বিস্তারিত:-
নোয়াখালী: জেলার সদর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের কালিতারা বাজার-সংলগ্ন আলী আজম বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন রাতে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত তানজিনা আক্তার ঝুমি (১৬) নোয়াখালী পৌরসভার সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের মেয়ে। তিনি স্থানীয় কালিতারা মুসলিম গার্লস একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফখরুদ্দিন মাহমুদ বলেন, রোববার বেলা ১১টার দিকে তানজিনার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তানজিনা গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় দুপুর সোয়া ১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের অজান্তে বসত ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই সময় তার মা রান্না ঘরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে তিনি ঘরে এসে মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন।
এদিকে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নীলফামারী: জেলার সৈয়দপুরে রাফসান জানি এমিল (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার বাঙালিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাফসান একই এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, এ বছর স্থানীয় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রাফসান। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করেছিল সে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট আসায় কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে সে ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, এ ঘটনায় আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
ঠাকুরগাঁও: জেলার হরিপুরে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার কামারপুকুর গ্রামের মুসা আলীর মেয়ে ও কামারপুকুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
মিতুর পিতা মুসা জানান, ৩ ছেলে মেয়ে মধ্যে মিতু তাদের দ্বিতীয় সন্তান। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সে আত্মহত্যা করে। হরিপুর থানার ওসি তদন্ত মুহা. শরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ: জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নী গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় নুপুর আকতার (১৬) নামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওই গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে। এবার উপজেলার দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, রোববার ফল প্রকাশের পর ফেল করার খবর পেয়ে নুপুর মনমরা হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের অগোচরে ঘরে ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ছিল। তার আত্মহত্যার খবর শুনে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা মর্মাহত।’ ওসি জিয়াউর বলেন, খবর পাওয়ার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ: জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে শোহেদা আক্তার (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় তার সহপাঠী ও পরিবারের স্বজনদের মধ্যে আহাজারি সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার পুরাকান্দলিয়া ইউনিয়নের বতিহালা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
শোহেদা আক্তার স্থানীয় বতিহালা গ্রামের ছমেদ আলীর মেয়ে। তিনি বতিহালা উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বতিহালা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলকাছ মিয়া বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। মৃত শোহেদা আক্তার দ্বিতীয় বার এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে ধোবাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল মিয়া বলেন, ‘রোববার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষার্থী শোহেদা আক্তার জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ফলাফল মেনে নিতে না পারায় তিনি নিজ ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পুনরায় পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হন। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জ: এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করায় প্রিন্স হাসান মাহাতী নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদ পাড়ায় বোনের বৈশাখী বেগমের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রিন্স সদর উপজেলার মেরী গোপিনাথপুর গ্রামের শরীফ মহসিন আলী বেল্টুর ছেলে। তিনি এ বছর মেরী গোপিনাথপুর খন্দকার শামসুদ্দিন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই বিপ্লব কুমার দাস বলেন, প্রিন্স হাসান মাহাতী এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মাদ পাড়ায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তিনি গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মনের কষ্টে সকলের অগোচরে বোনের ভাড়া বাসার ৫ম তলার একটি কক্ষে দরজা জানালা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হবিগঞ্জ: জেলায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এক কিশোরী বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। একই কারণে পৃথক ঘটনায় বিষ পান করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও দুই কিশোর।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক বিভারবী দাস জানান, রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বিষ পান করার ঘটনায় তিন কিশোর-কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
এর মধ্যে মাইশা আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আর অপর দুই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাইশা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আদমপুর গ্রামের মজিদ মিয়ার মেয়ে। স্থানীয় দেওয়ান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে ফেল করেছেন বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক কিশোর শুভ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একটি বিষয়ে ফেল করেছেন। অপরদিকে, বাহুবল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কিশোর মেহেদী হাসান স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে একটি বিষয়ে ফেল করায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, বিষ পান করে হাসপাতালে এক কিশোরীর মৃত্যু হওয়ার কথা জেনেছি। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকলে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
মাগুরা: এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় কথা সাহা (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী চতুর্থতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে মাগুরা জেলা শহরে রিমপি সাহা নামে এক আত্মীয়ের বাসায় বসবাসরত চতুর্থতলার ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল চারটার দিকে সে মারা যায়।
কথা সাহা মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে। সে মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে জানা যায় সে অংক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এদিকে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উল ইসলাম জানান, উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে কথা সাহা এবারের এসএসসিতে এক বিষয়ে ফেল করায় ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। এসএসসির ফল প্রকাশ হয়। ফলাফলে সে অকৃতকার্য হয়।
নোয়াখালী: জেলার সদর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের কালিতারা বাজার-সংলগ্ন আলী আজম বেপারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন রাতে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত তানজিনা আক্তার ঝুমি (১৬) নোয়াখালী পৌরসভার সল্যা ঘটাইয়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের মেয়ে। তিনি স্থানীয় কালিতারা মুসলিম গার্লস একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
নোয়াখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফখরুদ্দিন মাহমুদ বলেন, রোববার বেলা ১১টার দিকে তানজিনার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তানজিনা গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় দুপুর সোয়া ১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের অজান্তে বসত ঘরের আঁড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই সময় তার মা রান্না ঘরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে তিনি ঘরে এসে মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন।
এদিকে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নীলফামারী: জেলার সৈয়দপুরে রাফসান জানি এমিল (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার বাঙালিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাফসান একই এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও পরিবার জানায়, এ বছর স্থানীয় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রাফসান। পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার আশা করেছিল সে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট আসায় কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে সে ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, এ ঘটনায় আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
ঠাকুরগাঁও: জেলার হরিপুরে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মিতু (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) দুপুরে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি উপজেলার কামারপুকুর গ্রামের মুসা আলীর মেয়ে ও কামারপুকুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী।
মিতুর পিতা মুসা জানান, ৩ ছেলে মেয়ে মধ্যে মিতু তাদের দ্বিতীয় সন্তান। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর সে আত্মহত্যা করে। হরিপুর থানার ওসি তদন্ত মুহা. শরিফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
ঝিনাইদহ: জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নী গ্রামে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় নুপুর আকতার (১৬) নামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ওই গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে। এবার উপজেলার দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে হরিণাকুন্ডু থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, রোববার ফল প্রকাশের পর ফেল করার খবর পেয়ে নুপুর মনমরা হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের অগোচরে ঘরে ঢুকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
দুর্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মেয়েটি শান্ত প্রকৃতির ছিল। তার আত্মহত্যার খবর শুনে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা মর্মাহত।’ ওসি জিয়াউর বলেন, খবর পাওয়ার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ: জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে শোহেদা আক্তার (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় তার সহপাঠী ও পরিবারের স্বজনদের মধ্যে আহাজারি সৃষ্টি হয়েছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে উপজেলার পুরাকান্দলিয়া ইউনিয়নের বতিহালা গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
শোহেদা আক্তার স্থানীয় বতিহালা গ্রামের ছমেদ আলীর মেয়ে। তিনি বতিহালা উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বতিহালা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলকাছ মিয়া বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। মৃত শোহেদা আক্তার দ্বিতীয় বার এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে ধোবাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল মিয়া বলেন, ‘রোববার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষার্থী শোহেদা আক্তার জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ফলাফল মেনে নিতে না পারায় তিনি নিজ ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পুনরায় পরীক্ষা দিয়েও অকৃতকার্য হন। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
গোপালগঞ্জ: এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করায় প্রিন্স হাসান মাহাতী নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রোববার (১২ মে) পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মদ পাড়ায় বোনের বৈশাখী বেগমের ভাড়া বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। প্রিন্স সদর উপজেলার মেরী গোপিনাথপুর গ্রামের শরীফ মহসিন আলী বেল্টুর ছেলে। তিনি এ বছর মেরী গোপিনাথপুর খন্দকার শামসুদ্দিন স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই বিপ্লব কুমার দাস বলেন, প্রিন্স হাসান মাহাতী এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গোপালগঞ্জ শহরের মোহাম্মাদ পাড়ায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। তিনি গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মনের কষ্টে সকলের অগোচরে বোনের ভাড়া বাসার ৫ম তলার একটি কক্ষে দরজা জানালা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
তিনি আরও বলেন, দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
হবিগঞ্জ: জেলায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় এক কিশোরী বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছেন। একই কারণে পৃথক ঘটনায় বিষ পান করে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও দুই কিশোর।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক বিভারবী দাস জানান, রোববার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর বিষ পান করার ঘটনায় তিন কিশোর-কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
এর মধ্যে মাইশা আক্তার (১৭) নামে এক কিশোরীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আর অপর দুই কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাইশা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আদমপুর গ্রামের মজিদ মিয়ার মেয়ে। স্থানীয় দেওয়ান আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে ফেল করেছেন বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক কিশোর শুভ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একটি বিষয়ে ফেল করেছেন। অপরদিকে, বাহুবল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের কিশোর মেহেদী হাসান স্থানীয় একটি মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। সে একটি বিষয়ে ফেল করায় বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেব জানান, বিষ পান করে হাসপাতালে এক কিশোরীর মৃত্যু হওয়ার কথা জেনেছি। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকলে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
মাগুরা: এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় কথা সাহা (১৬) নামের এক শিক্ষার্থী চতুর্থতলা থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোববার (১২ মে) দুপুরে মাগুরা জেলা শহরে রিমপি সাহা নামে এক আত্মীয়ের বাসায় বসবাসরত চতুর্থতলার ছাদ থেকে সে লাফিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে, পরে ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বিকেল চারটার দিকে সে মারা যায়।
কথা সাহা মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে। সে মাগুরার মহম্মদপুরের বিনোদপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছিল। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে জানা যায় সে অংক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এদিকে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহান উল ইসলাম জানান, উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের রাজেশ সাহার মেয়ে কথা সাহা এবারের এসএসসিতে এক বিষয়ে ফেল করায় ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করে। এসএসসির ফল প্রকাশ হয়। ফলাফলে সে অকৃতকার্য হয়।