গাজীপুরের কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মুক্তা দে (৩২) নামের এক প্রসূতি শিক্ষিকার মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষিকা প্রসুতির ভাই অনুপ দে।
মৃত মুক্তা দে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের মুকুল দে'র মেয়ে। তিনি ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার মহদীপুর গ্রামের শ্রীকান্ত সরকারের স্ত্রী। মুক্তা কালীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এর আগে তাঁর প্রথম একটি সন্তান আছে। এটা দ্বিতীয় সিজার।
অনুপে বলেন, শনিবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আমার বোনের প্রসব বেদনা উঠলে তাকে কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর ডাক্তার আমাদের কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন। সেগুলো দেখে তিনি জানান তাৎক্ষনাত সিজার করাতে হবে। আমরাও ডাক্তারের পরামর্শে রাজি হই। সিজার শেষ হলে তাকে বেডে দেওয়া হয় রাত ১০টার দিকে।
তিনি আরো বলেন, রাত ৩টার দিকে আমাদের জানানো হয় তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা রোগী নিয়ে ঢাকায় রওনা দেই। উত্তরা পৌছালে অবস্থা ভালো না দেখে সেখানে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাদের কিছুই করার নেই। দ্রুত আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়। আসলে সিজারের পর থেকে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো কিন্তু ডাক্তার তা আমাদের জানায়নি। রবং ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম কুসুম মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমি ফোনে জেনেছি একজন প্রসূতি মারা গেছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে বিস্তারিত জেনে পরে জানাতে পারবো।
কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করা অভিযুক্ত ডাক্তার মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে সিজার হয়েছে ঠিক আছে। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমি পূনরায় দেখে রোগীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে রেফার্ড করলেও অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে। পরে সেখানে আজ সকালে রোগী মারা গেছেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান পিপিএম বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম মনজুর-এ-এলাহী বলেন, বিষয়টি আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে শুনতে পেরেছি। এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনজন চিকিৎসক দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে না জানলেও অন্যভাবে জেনেছি। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থাকলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।