আমিরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত উত্তরঙ্গের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বৃহত্তর সংগঠন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরে পলাশডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্মৃতিসৌধ হয় সেভাবে নির্মাণ করার জন্য আপনাদের যে প্রত্যাশা আপনাদের যে দাবী ইনশাল্লাহ আমরা সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য চেষ্টা করব।
মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আপনাদের কাছে একটা কথা আমরা যে জয় বাংলা বলি অনেক সময় দেখা যায় আমাদের ছেলে মেয়ে ভাই ব্রাদার আত্মীয়-স্বজন আপনজন তারা ভিন্ন লাইনে চলে। যে দেশটা আমরা নিজেরা প্রতিষ্ঠা করেছি বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনকে বাজিয়ে রেখে যুদ্ধ করে সেই দেশে আমার আত্মীয়-স্বজন আমার পরিবারবর্গ অন্যদিকে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কথা বলবে সেটা কিন্তু আমাদের জন্য লজ্জা স্বরুপ। আমি শুধু জয় বাংলা বলি এটাই যথেষ্ট নয় আমাদের পরিবার-পরিজন কি করে কোনদিকে যায় আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
বুধবার (১নভেম্বর) দুপুর ১টায় উপজেলার কালীবাড়ী ভদ্রঘাট গ্রামে অবস্থিত পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরে পলাশডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ও ভার্চুয়ালে থেকে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। এসময় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর সফিকুল ইসলাম ।
এসময় পলাশডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ সমন্বয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ বিমল কুমার দাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শহিদুল্লাহ সবুজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা, কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম রেজা, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সেখ-সহ পলাশডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ এর সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, জেলা উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
পলাশডাঙ্গার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সারা বাংলাদেশের মত সিরাজগঞ্জের ছাত্র জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের এক পর্যায়ে ১৯৭১ এর ২৭শে এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী সিরাজগঞ্জ দখল নেয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা যার যার সুবিধা মত জায়গায় পাক বাহিনীকে আক্রমণের লক্ষ্যে আত্মগোপন করে। এমনি অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী সরকারের নেতৃত্বে উপজেলার জাংলাগাঁতী গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান মাখন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সরকারকে নিয়ে পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জা পলাশডাঙ্গায় এসে যোগ দেন এবং পলাশডাঙ্গার পরিচালক নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বেই ছোট বড় মোট ৫৭টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর পলাশডাঙ্গা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। দ্বিতল ভবনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও ৭১ ফুট দৈর্ঘ্যরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা।