চলতি ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে হারিয়ে জয় দিয়ে মিশন শুরু করলেও সেই ধারা বজায় রাখতে পারেনি সাকিব বাহিনী। বিশ্বমঞ্চে নিজেদের সবশেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরে ফীকে হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন।
এদিকে গত দুদিনে নাটকীয়তা বেশ জমে উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বিশ্বকাপে নিজের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত সাকিব আল হাসান দেশে ফিরে কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন। জানা গিয়েছিল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার পুরো দুইদিন অনুশীলন করে কলকাতা যাবেন সাকিব। কিন্তু আর সেটা করেননি টাইগার পোস্টারবয় সাকিব।
কোচের সঙ্গে দুই সেশন কাজ করেই কলকাতার দিকে উড়াল দিয়েছেন তিনি। আর তার হঠাৎ এ আগমন জন্ম দিয়েছে নানান বিতর্কের। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) এতে বেশ বিব্রত। অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগেও গর্বের জায়গা ছিলেন সাকিব। তবে নিজ দেশেই কিনা দুয়ো শুনতে হলো সাকিবকে। সেটাও সাকিবের প্রিয় প্রাঙ্গণ মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে।
এরপর অনেকের প্রশ্ন, সাকিবের সঙ্গে সমর্থকদের ভুল বোঝাবুঝির বিষক্রিয়া নয় তো? গতকাল বৃহস্পতিবার ২৬ অক্টোবর মিরপুরের ইনডোরেও ঘণ্টা তিনেক ব্যাটিং অনুশীলন করেন সাকিব। সকাল ৯টা ৭ মিনিটে মিরপুর শেরে-ই বাংলার ইনডোর স্টেডিয়ামে এসেছিলেন। এরপর অনুশীলন শেষে দুপুর ১২টা ৪২ মিনিটে মিরপুর ত্যাগ করেন।
এদিন সকালে এক সেশন ব্যাটিং অনুশীলন করে স্টেডিয়ামের ইনডোর থেকে বের হতেই উপস্থিত কিছু দর্শক ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে ওঠে। তাই হয়তো সমালোচনা মেনে নিতে না পেরেই একদিন আগেই ঢাকা ছেড়েছেন তারকা এ ক্রিকেটার। ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাকিব নিজেই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপের মাঝপথে দেশে ফিরে বিজ্ঞাপনের কাজ সেরেছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপের মাঝে আবারও দেশে ফিরে সেই আগুনে ঘি ঢেলেছেন তিনি। তবে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করলে আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে পাশে পেলে এ নিয়ে কোনো বিতর্কই হতো না। বিসিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাকিবের দেশে ফেরার খবর ও কারণটা জানালেই এটি আরও সহজ হয়ে যেত। তবে সেটা করেনি বিসিবি।
যদিও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার রাবীদ ইমাম বুধবার দেশের শীর্ষস্থানীয় এক গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, অফিসিয়ালি একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত কেন দেওয়া হয়নি, তা জানা যায়নি। টিম ম্যানেজারের মন্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থাও সাকিবের পাশে নেই।
তবে পাশে কে আছে, কে নেই; তাকে কিছুই আসে-যায় না সাকিবের। মিশ্র অনুভূতি নিয়েই হয়তো শনিবার ইডেন মাতাবেন টাইগার দলপতি। এদিকে বিশ্বকাপের আগে থেকেই রানখরায় ভুগছিলেন সাকিব। কোনোভাবেই পারছিলেন না ছন্দে ফিরতে। উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরে নিজের মেন্টর ও ক্রিকেট গুরু নাজমুল আবেদীন ফাহিমের শরণাপন্ন হন সাকিব।
সাকিবের অনুশীলন ও মানসিক অবস্থা নিয়ে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের ভাষ্য, সে যে কাজ করতে এসেছিল, সেটা করেছে। সে খুশি কি না বুঝতে পারিনি। আমার যেটা মনে হয়েছে; ও (সাকিব) ফোকাস নিয়ে গেছে। এখন দেখতে হবে মাঠে কেমন করে। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখার পর বলতে পারব জিনিসগুলো কাজে লেগেছে কিনা। তবে মানসিকভাবে ভালোই মনে হয়েছে।
এদিকে বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত নিজেদের খেলা পাঁচ ম্যাচে খুব একটা সাফল্যের দ্যুতি ছড়াতে পারেননি সাকিব। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ১৪ গড়ে মাত্র ৪৫ রান করেছেন সাকিব। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন তিনি। অন্যদিকে বল হাতে ওভার প্রতি ৫ দশমিক ৫৪ গড়ে সাকিবের শিকার মোটের ওপর ৬ উইকেট। এর মধ্যে আফগানদের বিপক্ষে ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট তার সেরা পারফরম্যান্স। এ ছাড়া চোটের কারণে খেলেনি ভারতের বিপক্ষে।