প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের পদত্যাগের আন্দোলন করে লাভ নেই। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে, তারাই বড় শক্তি। তিনি বলেন, আন্দোলন করলে আপত্তি নেই, কিন্তু বিএনপি যদি আবার আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে তাহলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে আয়োজিত ১৫০ সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন; নানান কথা বলে। সেটা নিয়ে আমি এখন সমালোচনা করতে চাই না। কারণ, অনেকগুলো ভালো কাজ করেছি ভালো কথাগুলো বলে যেতে চাই কিন্তু এদের কথা এবং এদের কাজ সবই ধ্বংসাত্মক। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আমি সতর্ক করতে চাই। আজকে এই উন্নয়নগুলো ধ্বংস করুক সেটা আমরা চাই না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কী দিয়েছে? তারা দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করেছে? তারা দেশের কতটুকু উন্নতি করেছে, সেটাই হলো বড় প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, তখনই এ দেশের উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে সরকারে আসতে পারিনি। কারণ আমাদের গ্যাস অন্য দেশ কিনবে; আমি রাজি হইনি। খেসারত দিতে হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে পারিনি। জনগণের ভোট পেয়েছিলাম কিন্তু চক্রান্তের শিকার হয়েছিলাম। তার পরে দেশটার অবস্থা কী হয়েছিল? বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি-অপশাসনের কারণে এ দেশে ইমার্জেন্সি ঘোষণা হয়। তারপর আসে আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
তিনি আরও বলেন, সেই সময়টার কথা একবার চিন্তা করে দেখেন মানুষের কী দুরাবস্থা ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করার কোনো সুযোগ ছিল না। বিএনপির আমল থেকে যে অত্যাচার নির্যাতন শুরু হয়েছিল এ দেশের মানুষের ওপর, তারই ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যা হোক একটা পর্যায়ে ২০০৮ সালে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাস-ট্রাক চালকদেরকে রাস্তায় প্রতিযোগিতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তাদেরকে মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
চালকের বিশ্রামের দিকে নজর দিতে মালিকদেরকে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটানা গাড়ি না চালিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। গাড়ি চালাতে তেল-পেট্রল লাগে। যিনি গাড়িটা চালাবেন তারও তো তেল-পেট্রল ঠিক থাকতে হবে। তারও কিন্তু শরীর। মাথা যেন ঠিক থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে বারবার হামলা মেনে নেয়া যায় না। দখল করা জায়গা ছাড়তে হবে ইসরায়েলকে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের ঘটনায় আগামী শনিবার বাংলাদেশ শোক পালন করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশের ৮ বিভাগের ৩৯ জেলায় নির্মিত এ ১৫০ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ৪৫৪ মিটার। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে মোট তিন হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
এছাড়াও রংপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা জেলায় ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। ২০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব স্থাপনার মোট দৈর্ঘ্য ৬৮৯ মিটার। একই অনুষ্ঠান থেকে ময়মনসিংহের কেওয়াটখালী সেতু ও রহমতপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ১৬টি সেতু আজ উদ্বোধন হয়েছে। একই সংস্থার অর্থায়নে চলমান ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নির্মিত ২১ সেতুর উদ্বোধন হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় চলমান এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ১৪ সেতু উদ্বোধন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় মোট ১৪টি ওভারপাসও উদ্বোধন হয়।