আবিদ হাসান, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি: বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চা। বাঙ্গালির প্রিয় খাবারের তালিকায় এখন চা বাড়তি স্বাদ নিয়ে যোগ হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় অথবা জাতীয় নির্বাচন,অবসর কিংবা আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আয়োজনে চা ছারা চলেই না। কালের বিবর্তনে কাপ পিরিচে করে চা পান করা অথবা টি স্টলে কাপ পিরিচ তেমনটা দেখা যায় না। বিভিন্ন দোকান অথবা রেস্টুরেন্টে কাপ পিরিচের পরিবর্তে গ্লাস অথবা মগে করে চা বিক্রি করা হয় বর্তমানে। কাপ পিরিচে করে চা বিক্রির হারানো ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার গিলন্ড বাজারে চা বিক্রেতা মোঃ সোহরাব হোসেন মোল্লা। বয়সটা তার প্রায় ৪৫ বছর।
শুধু কি তাই, যত্ন করলে রত্ন মেলে, তারই জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে একেকটি কাপ পিরিচ আড়াই টাকা দরে কিনেছিলেন এই সোহরাব মোল্লা। কিন্তু পুরনো কাপ পিরিচের মত ভাগ্যটাও বদলায়নি তার।
গিলন্ড বাজারের ৫৪ বছর পূর্বের কাপ পিরিচে করে চা বিক্রেতা মোঃ সোহরাব হোসেন মোল্লা জানান, লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অভাব অনটনের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বই পড়তে ভাল বাসি। ঢাকা-আরিচা মহা সড়কের কালীগঙ্গা নদীর উপর তরা ব্রিজ তখনো হয়নি। সেই সময় ১৯৬৯ সাল থেকেই চা এর দোকান করেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের চা খায়িয়ে অনেকের পয়সা নেননি এই সোহরাব মোল্লা। তার এই মহৎ উদ্যোগ আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পুরনো কাপ পিরিচে চা খাওয়ার জন্য দুর দূরান্ত অনেকে আসেন চা খেতে। অতি যত্নে কাপ পিরিচগুলো এখনো রেখেছি। কয়েকটা কাপ পিরিচ ভেঙ্গে গেছে। তারপরেও প্রায় ২০/২২ টি এখনো আছে।
অনেক পুরনো চা বিক্রেতা আর স্বাধীনতার পূর্বের পুরনো কাপ পিরিচে যত্নসহকারে চা বানানো এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে মুগ্ধ সবাই। এমনটাই জানালের গিলন্ড বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান মোল্লা।
প্রতিবেশী এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের ৫ সদস্যের ভরণপোষণ করাতে অনেক কষ্ট হয় তার। দুই ছেলে এক মেয়েসহ সবাই যার যার সংসার গোছাতে ব্যস্ত হলেও ছোট ছেলেটা শারীরিক প্রতিবন্ধী, তারপরও বাবার অনুপস্থিতিতে তিনিও সহযোগিতা করে বলে জানান।
সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী হাসান আল মেহেদী জানান, স্বাধীনতার পূর্বের কাপ পিরিচে চা বিক্রি করেন তিনি, অনেক পুরনো চা বিক্রেতা, আমি মাঝে মধ্যে সেখানে যাই চা খেতে, তার এই বয়সে এতো কষ্ট করেন, আমরা দেখে অবাক হই। আমার পরিষদের পক্ষ হতে তাকে সহযোগিতা করি সাধ্যমত। এরপরও বিত্তবানদের কাছে সোহরাব মোল্লার জন্য সহযোগিতা আশা করি।
মাঝে মাঝে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন, কোথায় যেন হারিয়ে যান, জীবনের এই শেষ বয়সে ক্লান্ত তিনি, এখন ছুটি চান। অভাব আর বয়সের ভারে শরীর আর চলছে না তার। ছেলে মেয়ে নিয়ে আরেকটু ভাল থাকতে সরকার এবং বিত্তবানদের সহযোগিতা চান এই সোহরাব হোসেন মোল্লা।