কুষ্টিয়া থেকে: টানা হালকা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিতে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে শহরের এনএস রোড থেকে দক্ষিণ দিকের অধিকাংশ রাস্তা ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের রাস্তায়।
এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সরকারি কলেজ, পুলিশ সুপারের বাসভবনসহ অনেক অফিসের প্রবেশ মুখেও পানি বন্ধ হয়ে গেছে।
বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে, সেইসাথে বিপাকে গবাদিপশু পালন কারিরাও। এদিকে ভারি বৃষ্টির ফলে আগাম শীতকালীন সবজি সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৃষ্টিপাত পরিমাপ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১১৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিলে ১০ দশমিক ২ মিলিমিটার। বিগত তিন বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে ২০২০ সালে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিলো।
দৌলতপুর উপজেলা আদাবাড়ীয়া ইউনিয়নের টমেটো চাষি ওয়ারেস আলি জানান, তিন বিঘা টমেটোর ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে, এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে পুরো জমির টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি এলাকার আগাম বাঁধাকপি চাষী জিনারুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিতে বাঁধাকপির গাছ পঁচে যাচ্ছে। আর দুই একদিন বৃষ্টি থাকলে ক্ষেত থেকে বাধাকপি আর পাবো না।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নুরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিতে আগাম শীত কালিন সবজির কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
কুষ্টিয়া জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি হাজী রফিকুল আলম টুকু জানান, সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার এ চিত্র অনেক দিনের। দ্রুত সমাধান করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তিনি।
কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, দক্ষিণ প্রান্তে পানি নিষ্কাশন হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিকে সেচ খালের নিচ দিয়ে তৈরি করা সাইফুন দিয়ে।
১৯৬২ সালে নির্মাণ করা এই সাইফুন বর্তমান বাস্তবতায় অপ্রতুল। দ্রুত পানি বের করতে ওই সাইফুনের আগে মোল্লাতেঘড়িয়া থেকে মন্ডল পাম্প পর্যন্ত ৪০ ফুট প্রশস্ত নিষ্কাশন নালা করার চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুর পর উচ্চ আদালতে মামলা চলায় সে চেষ্টাও থেমে আছে কয়েক বছর। শহরের পানি বের করতে এই নালার কোন বিকল্প নেই। সাইফুন সংস্কার ও ও সংযুক্ত নালা করা হলে দ্রুত পানি নেমে যাবে।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, বৃষ্টিতে আমন চাষীদের জন্য উপকার। সবজির জন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে। আমরা মাঠ-পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছি। রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানানো যাবে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। হাঁটুপানি রিক্সা নিয়েও চলাচল করতে পারছে না মানুষ।