, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


নোবেল কমিটির ফোন পেয়ে নোবেল বিজয়ী অ্যানি বলেন, আমি ব্যস্ত, ক্লাস নিচ্ছি

  • আপলোড সময় : ০৪-১০-২০২৩ ০৫:৫০:৪১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-১০-২০২৩ ০৫:৫০:৪১ অপরাহ্ন
নোবেল কমিটির ফোন পেয়ে নোবেল বিজয়ী অ্যানি বলেন, আমি ব্যস্ত, ক্লাস নিচ্ছি
 এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউস এবং অ্যানি ল’হুইলিয়ার। পদার্থের ইলেক্ট্রন গতিবিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায় স্টকহোমে পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস।
 
চলতি বছরে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যানি এল’হুলিয়ার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। মঙ্গলবার তাকে যখন নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে ফোনকল দেওয়া হয় তখন তিনি ক্লাসে ছিলেন। তাই কল রিসিভ করেননি। পরে ক্লাসের বিরতিতে আবার কল পেলে তিনি রিসিভ করেন।

সে সময় নোবেল কর্তৃপক্ষের হয়ে অ্যাডাম স্মিথ যখন কল দেন তখন তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত, ক্লাস নিচ্ছি। তখন তার কাছ থেকে দুই থেকে তিন মিনিট সময় চেয়ে নেন অ্যাডাম স্মিথ। পরে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নোবেল পুরষ্কার জয়ের সংবাদ দেওয়া হয়। প্রতিউত্তরে অ্যানি এল’হুলিয়ার তাকে ধন্যবাদ জানান।

ক্লাস লেকচারে ব্যস্ত থাকার কথা শুনে অ্যাডাম স্মিথ জানতে চান তিনি এই সুখবরটি তার শিক্ষার্থীদের জানাবেন কি না? উত্তরে অ্যানি বলেন, তাদেরকে অবশ্যই জানাবো। তারা জানলে আশা করি অনেক খুশি হবে। এটা অবশ্যই তাদের জন্য অনেক মজাদার বিষয় হবে। তবে আমাকে অবশ্যই আমার ক্লাসের লেকচারে ফিরে যেতে হবে।

এ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছে নোবেল কর্তৃপক্ষ। সেখানে অ্যানি এল’হুলিয়ারের ফোনে কথা বলার একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়েছে, একজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকের গল্প! পদার্থবিজ্ঞানে ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়া অ্যানি এল’হুলিয়ারকে তার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করা যায়নি। যখন আমাদের নতুন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীকে কল দেওয়া হয় তখন তিনি লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে লেকচারে ব্যস্ত ছিলেন।

অ্যানি এল’হুলিয়ারকে নোবেল পুরস্কারের সংবাদ দেওয়ার সেই ফোন কলের রেকর্ডটিও ফেসবুকে প্রকাশ করেছে নোবেল প্রাইজ কর্তৃপক্ষ। যেখানে শোনা যায় তিনি ক্লাসের জন্য নিজের ব্যস্ততা প্রকাশ করছেন।

এদিকে নোবেল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অ্যাগোস্টিনি, ক্রাউস এবং ল’হুইলিয়ার আলোর অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত স্পন্দন তৈরির একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন, ইলেকট্রনগুলোর চলাচল বা শক্তি পরিবর্তনের প্রক্রিয়াগুরো দ্রুত পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিন বিজ্ঞানীর এই আবিষ্কার অনু-পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনের জগৎ অন্বেষণের জন্য মানুষের হাতে নতুন সরঞ্জাম তুলে দিয়েছে।

চলতি বছর ২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হচ্ছে নোবেল বিজয়ীদের নাম। গত সোমবার (২ অক্টোবর) চিকিৎসাবিজ্ঞানে, মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদার্থে, বুধবার (৪ অক্টোবর) রসায়নে, বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সাহিত্যে এবং শুক্রবার (৬ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম জানা যাবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।

এদিকে ২০২৩ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বিজ্ঞানী ক্যাটালিন কারিকো এবং আমেরিকান বিজ্ঞানী ড্রিউ উইসম্যানকে। কোভিড-১৯’র বিরুদ্ধে কার্যকর এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন তারা।

এর আগে গত বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন, ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যালেইন অ্যাস্পেক্ট, মার্কিন বিজ্ঞানী জন এফ. ক্লজার এবংঅস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী অ্যান্টন জেলিঙ্গার। ‘বিজড়িত ফোটন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেল অসমতার লঙ্ঘন প্রতিষ্ঠা এবং কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞানে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য’ এই পুরস্কার পান তারা।

গত ২০২১ সালেও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন জাপানি আবহাওয়াবিদ স্যুকুরো মানাবে, জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমান এবং ইতালিয়ান পদার্থবিদ জর্জিও পারিসি। বৈশ্বিক উষ্ণতার পূর্বাভাস প্রদান এবং কমপ্লেক্স ফিজিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার বিষয়ে যুগান্তকারী অবদানের জন্য তারা বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কারে ভূষিত হন।

এদিকে ডিনামাইট আবিষ্কারক সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের ১৮৯৫ সালে করে যাওয়া একটি উইল অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। প্রথম পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। সেময় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সফল, অনন্যসাধারণ গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তি। যদিও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় ১৯৬৯ সাল থেকে।
 
এ বছর অর্থমূল্য বাড়ছে নোবেল পুরস্কারের। গতবারের চেয়ে এ বছরের বিজয়ীরা ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বেশি পেতে চলেছেন। নোবেল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৩ সালে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাড়িয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্রোনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সর্বশেষ সংবাদ