এবার বরের নাম মেঘ আর কনে বৃষ্টি। দুজনে মিলে মেঘবৃষ্টি। মেঘবৃষ্টির গায়ে জড়ানো নানা রঙিন কাপড়। গতকাল বুধবার ১০ মে রাতে ছিলো মেঘবৃষ্টির বিয়ে আর আজ বৃহস্পতিবার ১১ মে ছিলো বৌভাত। রঙিন কাপড়ে জরানো ক্ষুদ্রাকার এ বর কনেকে দেখতে ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ। তাদের যেন আগ্রহের শেষ নেই। আর হবেই বা না কেন! এ তো ব্যাঙের বিয়ে।
এদিকে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জে ৯ লক্ষ ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে এবার ইসলাম ধর্মের রীতি মেনেই মেঘ-বৃষ্টি নামে দুই ব্যাঙের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হয়েছে অনেককেই। দেশের উত্তরের নাতিশীতোষ্ঞ জেলা গুলির মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম। তবে এবার এ জেলায় দিন দিন বেরেই চলেছে তাপমাত্রা। নেই বৃষ্টিপাত, সঙ্গে প্রচন্ড দাবদাহ। পুড়ছে চারদিক নাভিশ্বাস উঠেছে জন জীবনে। খড়া ও দাবদাহে ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে-সেই বিশ্বাস থেকেই এ বিয়ের আয়োজন।
মেঘ নামের বর ব্যাঙের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় পীরগঞ্জ উপজেলার ভাকুড়া খালপাড়ার আনিসুরের বাড়িতে। আর কনে হিসেবে বৃষ্টি ব্যাঙের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয় নারায়নপুর গ্রামের আমজাদ আলীর বাড়িতে। শাড়ি, কাপড় দিয়ে সাজানো হয় বর-কনেকে। টিপ ও অলতাও পড়ানো হয় কনে ব্যাঙ বৃষ্টিকে। বিকালে গায়ে হলুদের পর্ব শেষ করে সন্ধায় ভাকুড়া খালপাড়া থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে বরযাত্রী নিয়ে নারায়পুরে কনে বৃষ্টির বাড়িতে আসেন বর পক্ষ।
খাওয়া-দাওয়া শেষে ইসলাম ধর্মে রীতি মতে দেন মোহর ধার্য্য করে বর ও কনেকে ইজাব-কবুল করান কাজল আহাম্মেদ। সম্পন্ন করা হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ইসলামী ভাব ধারায় আয়োজন করা ব্যাঙের এ বিয়ে দেখতে ঢল নামে নারী পুরুষের । কনে বৃষ্টির পিতা আমজাদ আলী জানান, এ বিয়ের দেন মোহর ধার্য করা হয় ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। এর মধ্যে নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৯৯ টাকা এবং অবশিষ্ট টাকা বাকি রেখে ইসলামী বিধি বিধান অনুসরন করেই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বিয়ে শেষে উপস্থিত লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
এদিকে মিনারা বেগম নামে এক গৃহবধু জানান, ব্যাঙের বিয়ে হচ্ছে শুনেই দেখতে এসেছেন। ইসলামী শরিয়ত মতে মানুষের মত ব্যাঙের বিয়ে দেয়া তিনি এটাই প্রথম দেখেছেন। এতে তার খুব ভাল লেগেছে। তবে সোহেল হাসান শুভ নামে এক যুবক জানান, ইসলামী বিধান অনুসরণ করে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া ঠিক নয়। এটি কুসংস্কার। এমন আয়োজন এবার প্রথম দেখলেন তিনি।
বিয়ের পরের দিন বৃহস্পতিবার (১১ মে) বর মেঘের বাড়িতে আয়োজন করা বৌভাতের। নিমন্ত্রণ পেয়ে বৌভাত অনুষ্ঠানে অংশ নেন অনেককেই। ব্যাঙের বিয়ে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, লোকজ বিশ্বাস থেকে প্রবাহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।