কিছুদিন আগে থানায় আটকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মারাত্মকভাবে আহত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর একজন অতিরিক্ত কমিশনার ছাত্রলীগ নেতাদের বেদমভাবে মারধর করে রক্তাক্ত ও আহত করার ঘটনায় সম্পৃক্ত হওয়ায় তার উপযুক্ত বিচার এবং শাস্তি দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে বর্তমানে।
এদিকে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে থানায় নিয়ে প্রহারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে দেশের বৃহত্তম ও ক্ষমতাশালী শক্তিধর এই ছাত্রসংগঠনের মধ্যে এক ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, বির্তকের ঝড়। তেমনই সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
সেই অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নিয়ে প্রশ্ন, বহুল আলোচিত ঘটনাবলীসহ ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড, ঐতিহ্য, নানা বিতর্ক, জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। যার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি লিখেছেন রেজাউল করিম খোকন।
এদিকে একটি একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাদের জড়িয়ে পড়া এবং পুলিশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, সংঘাতের ঘটনাটি কোনোভাবেই কাঙ্খিত নয়। যা ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করেছে ভীষণ ভাবে। একইভাবে পুলিশের সন্ত্রাসী, আগ্রাসী, হিংসাত্মক, অমানবিক ঘটনা নাগরিক সমাজে নিন্দিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন অকপটে স্বীকার করেন, এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত সন্দেহ নেই।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ যেমন সবার আস্থা এবং নির্ভরতার প্রতীক। তেমনি ভাবে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ যুগ যুগ ধরে গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক, দেশের সবার ভালোবাসায় সমৃদ্ধ একটি শক্তিশালী ছাত্রসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত।
তাছাড়া আধুনিক, উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করে অমানবিক নির্যাতন চালানোটা কোনোভাবে কাম্য হতে পারেনা। আমরা তেমন অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছি। বর্তমানে এ নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে নিশ্চয়ই প্রকৃত অপরাধী সাব্যস্ত হবে এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা সেই তদন্তের ফলাফল দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা এ নিয়ে অহেতুক বিতর্কের সূচনা করতে চাইনা।
এদিকে নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ছাত্রলীগ এদেশের প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সামগ্রিক কল্যাণে কাজ করছে। শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু, সুন্দর, চমৎকার পরিবেশ রক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার হাতকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগ সব সময়েই সচেষ্ট। এমতাবস্থায় কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সম্পৃক্ত হয়ে সংগঠনের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার অবকাশ নেই। আগামীতে এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ অবশ্যই সচেতন থাকবে, নিশ্চিত করে বলতে পারি।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, শিক্ষাঙ্গন ছাড়িয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, হল দখল ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে নিন্দা, সমালোচনার পাত্র হচ্ছে ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু কবে জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে গৌরবময় ভূমিকা পালন করে এদেশের মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার অনন্য প্রতীক হিসেবে গন্য হয়ে আসছে।
সবার আস্থা, ভরসার স্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশে যখন গণবিরোধী কর্মকাণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যখন দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে অরাজকতা কায়েম করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজপথে সাধারণ মানুষের কল্যাণে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে। এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা টেন্ডারবাজি, অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি করার অবকাশ নেই।
ছাত্রলীগ কোনোভাবেই সমাজবিরোধী অপকর্মের সমর্থন করেনা, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়না। একটি সুস্থ- সুন্দর, চমৎকার শিক্ষাঙ্গন গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সার্বিক উন্নয়নে যা প্রয়োজন তার বাস্তবায়নে সদা সচেষ্ট থাকে। শিক্ষার পরিবেশ যেন উন্নত এবং সমৃদ্ধ থাকে, আধুনিক যুগোপযোগী জ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার যাতে বিকাশ ঘটে শিক্ষালাভের পর যাতে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের যোগ্য হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে।