রাবি প্রতিনিধি: "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে নতুন মোড়ক দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। যাতে ক্ষমতাসীনদের কেউ সমালোচনা করতে না পারে। সেই ব্যবস্থায় করা হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। যেই রাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করা হয় সেটা অন্তত সভ্য রাষ্ট্র নয়।"
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব।
নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদ অন্তুরের সঞ্চালনায় এই শিক্ষক আরো বলেন, খুবই ন্যাক্কারজনকভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাইদুল ইসলামকে হয়রানি ও মার্কিন প্রবাসী পিএইচডি শিক্ষার্থীর ফেসবুকের একটি পোস্টের জবাব দেয়া হয়েছে তার ষাটোর্ধ্ব মাকে বন্দী করার মাধ্যমে। এই ঘটনাগুলো জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। একটা ঘটনায় দেশের সাধারণ নাগরিক বললে কাজ হয় না কিন্তু বিদেশি দাদারা বললে সাথে সাথে কাজ হয়ে যায়, যা সরকারের আরেকটি ন্যাক্কারজনক বৈশিষ্ট্য।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে যে কালো আইন করা হয়েছে সে আইনে গত একবছর ধরে চরম অবিচারের স্বীকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। এই আইনের স্বীকার হয়ে দুই বছর আগে মুশতাক নামক একজন লেখককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করা আমাদের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার। আজকে শুধু খাদিজাই নয় ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজনকে শোকজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরও একজনকে শিক্ষককে ফেসবুকে একটি পোস্টের কারণে রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে শোকজ করা হয়েছে। আমাদের একটাই দাবি আমরা অবিলম্বে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। একই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাকে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে বিরোধী পক্ষকে জিম্মি করে রাখা হচ্ছে উল্লেখ করে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক পারভেজ আজহারুল হক বলেন, "প্রায় এক বছর ধরে খাদিজাকে নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে। শুধু খাদিজাই নয় এমন অসংখ্য তরুণ শিক্ষার্থী যারা সরকার দলের বিপক্ষে কথা বলছে তাদের জিম্মি করে রাখা হচ্ছে কারাগারে। এই আইনের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে। আমি এই আইন বাতিলসহ এই আইনের আওতায় যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের সুবিচারসহ খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।"
এছাড়া মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আ.ক.ম. মাসুদ রেজা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মদ মাহমুদ জামান কাদেরী, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদি হাসান মুন্না, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে খাদিজাতুল কুবরা এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ। গত বছরের ২৭ আগস্ট নিউমার্কেট থানার মামলায় মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনলাইনের যে অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন খাদিজা। তখন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন।