ফয়সাল হক চিলমারী (কুড়িগ্রাম)থেকে: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ফের ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত এক সপ্তাহে আরও বিশটি পরিবার বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন। ওই এলাকার আরও সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক। গৃহহীন ওই পরিবার গুলোর দাবী এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনো ধরণের সহযোগিতা মেলেনি। শুধু তাই নয় এখন পর্যন্ত ওই এলাকার প্রায় এক একক ফসলি জমি ও সড়ক নদের মধ্যে বিলিন হয়ে গেছে।
একদিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভাঙনের তীব্র গতি। সব মিলিয়ে ওই অঞ্চলের কৃষিজীবী ও দিনমজুররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকের স্থান হয়েছে সরকারী আবাসন ঘরে। তবে বেশির ভাগ উদ্বাস্তু পরিবারের এখনো মাথা গোঁজার স্থায়ী কোনো জায়গা হয়নি বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতী এলাকায় গত এক সপ্তাহে আরও অন্তত বিশটি পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়েছেন। এরই মধ্যে তাদের থাকার জায়গা হারিয়ে বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। ভাঙন কবলিত ওই পরিবারদের পাশে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের আশ্বাস মেলেনি। ওই এলাকায় পৌঁছায়নি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, বৈলমনদিয়ারখাতা, চড়ুয়াপাড়া, তেলিপাড়া ও গাজীরপাড়াসহ ইউনিয়ন জুড়েই ভয়াবহ ভাঙনের রুপ ধারণ করেছে। বসতভিটা বিলীনের পর নিঃস্ব হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে নদের কিনারের পাশেই পাটের শোলা ও টিন দিয়ে ছাপরা ঘর উঠিয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গৃহহীন এসব পরিবারের এখনো কোনো স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন সরকারের দেয়া আবাসন ঘরে, কেউ আবার আত্মীয়ের বাড়িতে। আবার কেউ জমি লিজ নিয়ে নতুন করে ঘর নির্মাণ করছেন। ভাঙনের শিকার পরিবার গুলোর পাশে দাঁড়ায়নি সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা, এমনকি জন প্রতিনিধিরাও।
সরকারী আবাসনে আশ্রয় নেয়া সদ্য ভাঙনের শিকার শাখাহাতী চরের নুরুল হক জানান, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে আমার ভিটে মাটি নদের পেটে চলে গেছে। এখন আপাতত আবাসনের ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কোথাও যাবার জায়গা নেই।
ওই এলাকার মল্লিক খাতুন বলেন, কয়েকদিনের মাথায় আমার বাড়িটি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমি সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। আমরা রিলিফ চাইনা নদী ভাঙ্গন বন্ধ চাই।
একই গ্রামের মহসিন মিয়া বলেন, আমার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নিজের জায়গা না থাকায় নদীর পাশেই ছাপড়া তোলে কোন মতো ঠাই করে আছি। সরকারের কাছে দাবী, নদীটা যেন বানদি দেয়।
ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন করা না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব বিপদে পড়বে এই এলাকার বাসিন্দারা। আর যাতে নদী না ভাঙ্গে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাফিউল আলম জানান, গতকাল স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের উপবরাদ্দ দেয়া হয়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য। আর যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন তাদের পুনর্বাসনের জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।