এবার শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেছেন, “সুরা নিসার ৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন—‘কেউ কোনো ভালো কাজের সুপারিশ করলে এর মধ্যে তার অংশ থাকবে। আর কেউ মন্দ কাজের সুপারিশ করলে এর মধ্যেও তার অংশ থাকবে।’ এটার মানে কী? আমার সুপারিশের কারণে কেউ যদি কোনো দায়িত্বে যায়, আর সে যদি কোনো খারাপ কাজ করে, তার দায়িত্ব কিন্তু আমার ঘাড়ে নিতে হবে। তাহলে ভোট দেওয়ার সময় সুরা নিসার ৮৫ নম্বর আয়াত মাথায় রাখতে হবে। আমি যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব—সে যেন খারাপ কাজ না করে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ না করে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার না করে।”
গতকাল শনিবার ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ছিপাতলি আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিভাগীয় মাদরাসা শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম-৫ আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এ সময় ডা. দীপু মনি বলেন, “যারা একটি দেশের স্বাধীনতাকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে জাতির জনককে সপরিবারে শেষ করতে চায়, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করতে চায় এবং শুধু রাজনৈতিক আদর্শের কারণে গ্রেনেড হামলা করে নারী-শিশুদের হত্যা করতে চায়—তারা কি ইসলামের পক্ষে কাজ করেছে? আল্লাহ পাক কোরআনে সুস্পষ্ট করে বলেছেন, ‘এতিমের সম্পদের কাছে যেও না।’ অথচ তারা এতিমের সম্পদ মেরে খায়, তারা হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন করে। যারা সত্যকে গোপন করে মিথ্যা প্রচার করেন, তারা কারা আপনারা জানেন।”
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘সারা বছর সরকার বলে—সেবা আপনার দরজায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু, এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবা আপনার হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিয়েছেন। আজকে আপনাদের সবার হাতে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট। এই মোবাইলেই সব সেবা পাওয়া যায় এখন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, কৃতজ্ঞ হতে। কৃতজ্ঞতা ইসলামের ভালো গুণ। শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ হতে হবে।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামি, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে ২০১৫ সালে তিনি পৃথক মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করেছেন। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যত প্রকল্প গ্রহণ করি, প্রত্যেকবার মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তার কারণ, সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, মাদরাসায় আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা দেওয়া হয় না। কিন্তু, সেটি বাস্তব নয়।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে তিন হাজার মাদরাসায় বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো মাদরাসায় বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এক হাজার ৩৬টি মাদরাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ক্লাব ও ভোকেশনাল কোর্স চালু করা হয়েছে। শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মাদরাসায় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী যাতে সুনাগরিক ও বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য শিক্ষকদের কাজ করে যেতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে—যারা নামে ইসলাম, কিন্তু বাস্তবে না। আর যারা মুখে যা বলে, বাস্তবেও তা করে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সঙ্গে থাকতে বলেছেন।’ ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন। তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একইভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তার দিন শুরু হয় তাহাজ্জুদ, ফজরের নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।’
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাঁচ ওয়াক্ত আজানের সময় বলি—নামাজের দিকে আসো, কল্যাণের দিকে আসো। তাহলে কল্যাণ কে করেছে? শেখ হাসিনা করেছে। আল্লাহর রাসুল বলেছেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে যাও। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব। এজন্য আমাদের জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’