কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নাগেশ্বরী মহিলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রের একটি কক্ষে এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ফটোশেসন করেন মেডিকেল টিমের এক সদস্য। তোলেন সেলফিও। সেই সেলফিসহ আরও ৬টি ছবি নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে পোষ্ট করেন ওই মেডিক্যাল সদস্য। সে ছবি ভাইরাল হওয়ার পর অভিভাবক, পরীক্ষার্থী ও সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে। মেডিকেল টিমের ওই সদস্যর নাম হাফিজুর রহমান। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট ও বহির্বিভাগ ইনচার্জ। তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে ছবিগুলে পোস্ট করে লেখেন, 'এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের মেডিকেল টিম এ আজ কিছু সময়।'
জানা যায়, মঙ্গলবার ২২ আগস্ট ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষায় ওই কেন্দ্রের ৫নং কক্ষে একজন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে কেন্দ্র সচীব মেডিক্যাল টিমকে খবর দেন। এ সময় উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম ও ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান চিকিৎসা দিতে কেন্দ্রের ওই কক্ষে যান। উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিলেও ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান নিজের মোবাইল ফোনে সেলফি ও ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন।
নাম প্রকাশে একজন পরীক্ষার্থী জানান, তিনি বিভিন্ন আঙ্গিকে কমপক্ষে ১০/১২টি ছবি তোলেন। এতে তাদের পরীক্ষার মনযোগ নষ্ট হয়। এরপর কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তিনি ৬টি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন।
এ নিয়ে সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে পরীক্ষা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আইন অনুযায়ী কেন্দ্রে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও পরিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন বা কোনো প্রকার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেখানে একজন মেডিক্যাল সদস্য কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ এবং পরীক্ষা কক্ষে পরিক্ষার্থীদের পরিক্ষা দেবার দৃশ্যসহ সেলফি তুলে সেটি আবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াকে আইনের ব্যত্যয় ও কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকাদের অবহেলার কারণ বলে মনে করছে সচেতন মহল।
ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান পরীক্ষা কক্ষে সেলফি তোলা এবং তার ফেসবুকে দেবার কথা স্বীকার করে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশটা ভালো লেগেছিল তাই সেলফি তুলেছিলাম। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে তোলা হয়নি। বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ফেসবুক থেকে ছবি ডিলিট করেছি। কেন্দ্র সচীব ও কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমুল ইসলাম মন্ডল বলেন, আমার কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম এসে চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। কিন্তু কে পরীক্ষা কক্ষে সেলফি তুলেছে তা আমার জানা নেই। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রে ছবি তোলা নিষেধ।
উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার মাইদুল ইসলাম পরীক্ষা কেন্দ্রে এক পরীক্ষার্থীর চিকিৎসা দিতে যাবার কথা স্বীকার করে বলেন, এসময় ফার্মাসিস্ট হাফিজুর রহমান আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে কখন সেলফি ও ছবি তুলেছে আমার জানা নেই। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান বলেন, কোন অবস্থাতে কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেবার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।