ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে এমটিএফই নামক একটি প্রতিষ্ঠান। উল্টো গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স দেখাচ্ছে ঋণাত্মক। দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল।
খুব দ্রুত অ্যাপটি বাংলাদেশের শহর থেকে গ্রাম সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছিল। অধিক লাভের আশায় এতে বিনিয়োগ করেছিলো হাজারো যুবক। ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে অনলাইনে বিনিয়োগ করে কম সময়ে অধিক মুনাফার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্লাটফর্মের মধ্যে রিপটন কয়েন, সিজি ট্রেড ও এমটিএফই অন্যতম অ্যাপ। বাংলাদেশে এগুলোর কোনটিরই বৈধ কোন নিজস্ব অফিস নেই। আছে শুধু এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি। এসব প্রতিনিধি কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া বড় একটি নির্দিষ্ট মুনাফার নিয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের কম সময়ে অধিক মুনাফার আকর্ষণীয় লোভ দেখায়। এরপর কোম্পানিতে নিজস্ব অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে অর্থ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে আসছে।
আর এরই ধারাবাহিকতায় অনলাইনভিত্তিক ‘এমটিএফই’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে হাজার থেকে লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শহর কিংবা গ্রাম- যেখানে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন। সম্প্রতি এই অভিনব পদ্ধতির ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ হারানোর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। নিঃস্ব হওয়ার পর কে কত অর্থ কীভাবে বিনিয়োগ করেছিলেন তার সবকিছুই বেরিয়ে আসছে। বিনিয়োগের উপযুক্ত কোন কাগজপত্র না থাকায় বর্তমানে অ্যাপে বিনিয়োগকারী সবারই মাথায় হাত। হঠাৎ করে এমটিএফই অ্যাপ থেকে বিনিয়োগকারীর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে ডলারে পরিণত করা টাকাও উধাও হয়ে গেছে।
এছাড়া বিনিয়োগকারী প্রতিটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অ্যাপটি আরও অর্থ পাবে বলে উল্টো ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে। অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থ উল্লেখ করে তার আগে বিয়োগ (মাইনাস) চিহ্ন দিয়ে রেখেছে। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন সর্বশান্ত হয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখছেন। তবে বিনিয়োগকারীরা পথে বসলেও কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এলাকাভিত্তিক ওই কোম্পানির সিইও নামক কতিপয় ব্যক্তি, যাদের দেখানো প্রলোভনে পড়ে সকল শ্রেণির মানুষ অধিক লাভের স্বপ্ন বুনে এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলেন।
বাংলাদেশে এমটিএফই-এর কোনো অফিস নেই, কোনো এজেন্ট কিংবা প্রতিনিধি নেই। শুধুমাত্র অ্যাপের মাধ্যমে ডলার নিয়ে চলে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বছরের শুরুর দিকে অনেকেই ব্যবসাটি গোপনে করলেও অন্যদের অতি লাভের আশায় ডেসটিনির মতো অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রকাশ্যে সভা-সেমিনার করতে দেখা যায় অনেককে। দেশে তেমন কোনো বিনিয়োগকারী না থাকলেও বেশি পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ করলে এমটিএফই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের ‘সিইও’র টাইটেল দেওয়া হয়। ‘সিইও’রাই অন্যদের এমটিএফইতে টাকা বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তবে তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত কেউ নন।
ভুক্তভোগীরা জানান, এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিনোযোগ করা টাকার ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হতো। হঠাৎ করেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারা টাকা উঠাতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে কোন ডলার নেই। উল্টো তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে কোম্পানি আরও অর্থ পাবে বলে মাইনাস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এমটিএফই। লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝাও ধরিয়ে দিয়েছে তারা। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে। তবে প্রথম দিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন এবং যারা চতুর- তাদের অনেকেই মুনাফা তুলে নিয়েছেন। আর যারা বেশি মুনাফার আশায় ছিলেন বা প্রাপ্ত মুনাফার অর্থ তুলে নিতে পারেননি, তারা সর্বশান্ত হয়েছেন।