, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


বঙ্গবন্ধুর শোকে ৩৫ বছর খালি পায়ে হেঁটেছেন নড়াইলের ‘বেদুঈন সাত্তার’

  • আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৩ ০৩:১৮:৫৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৩ ০৩:১৮:৫৩ অপরাহ্ন
বঙ্গবন্ধুর শোকে ৩৫ বছর খালি পায়ে হেঁটেছেন নড়াইলের  ‘বেদুঈন সাত্তার’ ছবি: সংগৃহীত
আব্দুস সাত্তার মোল্যা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা। এখন তার বয়স ৯৬ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ভালোবেসে বেদুইন সাত্তার নাম দেন। সদ্য স্বাধীন বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে এক জনসভায় যার নাম দেন বেদুইন সাত্তার।

নানা সংগ্রাম আর প্রতিবাদের মধ্যে কাটানো সাত্তার মোল্যা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে অনেকটা স্মৃতিশক্তিহীন। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বেদুইন উপাধি নিয়ে আজও চারিদিকে বঙ্গবন্ধুকেই খুঁজে বেড়ান এই মুক্তিযোদ্ধা। একা চলতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসে কখনও ছেলে, কখনও ছেলের বৌয়ের হাত ধরে ঘরের বাইরে যান তিনি। স্মৃতিতে সবই আছে, কিন্তু বয়সের ভারে কথাবার্তা কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে।

জানা গেছে, তৎকালীন নড়াইল মহাকুমার বিষ্ণুপুর গ্রামের ব্রিটিশ আন্দোলনের নেতা নোয়াই মোল্যার ছেলে আব্দুস সাত্তার মোল্যা। তিনি ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হয়ে যান। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নড়াইল সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই যেখানেই বঙ্গবন্ধুর সভা সেখানেই ছুটে যেতেন তিনি। সেটি খুলনা হোক অথবা চট্টগ্রাম, কিছুই তাকে থামিয়ে রাখতে পারতো না।

বঙ্গবন্ধুর বেদুইন সাত্তার নড়াইলের নিভৃত একজন রাজনীতিবীদ। ৬ ফুটের বিশাল দেহের অধিকারী যুবক সাত্তারকে সবাই একটু সমীহ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। ঘরে ঢুকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে আপন ছোটভাই গোলাম সরোয়ারকে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন বড়ভাই জাফর আহম্মেদ। কিন্তু তখন তিনি বাড়ি না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পরে পালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে এই কথা তিনি মহাকুমা শহর নড়াইলে এসে জানতে পারেন ১৬ আগস্ট সকালে। প্রচণ্ড আঘাত পান মনে। পরদিনই পত্রিকায় সে খবর ছাপা হয়, তিনি জানতে পারেন নিজের বাড়ির সিঁড়িতেই বুলেটে শেষ হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সিঁড়িতে খালি পায়ে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে থাকার কাহিনী শুনে প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে আর স্যান্ডেল পায়ে দিবেন না। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমনই কাজ এরপর থেকে খালি পায়ে হেটে বেড়াতেন বেদুঈন সাত্তার। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকরের খবর শুনে ৩৫ বছর পরে তিনি স্যান্ডেল পায়ে দেন এই বঙ্গবন্ধু ভক্ত। 

৯৫ বছর বয়সী বেদুঈন সাত্তার এর স্মৃতি এখন দুর্বল, তবে রসিকতা আজো কমেনি। বলেন, ছোট হাসিনাকে আমি ডাকতাম রেনুর পোনা বলে, ভাবির নাম রেনু সেটা মিলিয়ে বলতাম। আর নাসের ভাইয়ের এক পা খোঁড়া ছিলো ওনাকে ডাকতাম তৈমুর লং । 

স্থানীয় চাচুড়ি এলাকার প্রবীণ ইলিয়াস শেখ বলেন, বঙ্গবন্ধু মারা যাবার পরে তিনি খালি পায়ে হেঁটেছেন বহুদিন। আগরতলা মামলার সময় আমাদের এলাকা থেকে টাকা চাঁদা তুলে তা বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতেন।

বেদুঈন সাত্তারের বড় ছেলে সুজাউদ্দৌলা বলেন, মা আমার নাম রেখেছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস। আব্বার কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু আমার মায়ের নাম মমতাজ জেনে সম্রাট শাহজাহানের ছেলের নামে আমার নাম রাখেন সুজাউদ্দৌলা। 

নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এড. এস এ সতিন বলেন, সাত্তার ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ একজন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি বহুদিন জুতা/স্যান্ডেল পায়ে দেননি। তিনি একজন প্রকৃত শেখ মুজিব প্রেমী।
জাতিসংঘে গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস

জাতিসংঘে গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস