এবার দামে লাগাম টানতে আমদানির হুমকি দেওয়ার পরদিনই সারাদেশে ডজন প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে ডিমের দাম। আজ সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। একদিন আগেই এই দাম ছিল ১৭০ টাকা। দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়।
এদিকে বরিশালে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ডিমের হালি ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও আজ সোমবার বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। চট্টগ্রামে রবিবার ডিমের ডজন ছিল ১৬০ টাকা, আজ সোমবার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সিলেটে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমে দেড়শ টাকা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকায়। সপ্তাহ-দুয়েক ধরেই টালমাটাল ডিমের বাজার।
একটি ডিম কিনতে ভোক্তার খরচ হচ্ছে ১৪ টাকার বেশি, যা ডিমের দামে রেকর্ড। এদিকে প্রান্তিক খামারি বলছেন, বাজারের তুলনায় প্রতি পিস ডিমে তারা ২ টাকা কম পান। কারণ ডিম বিক্রি পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত। দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন, সমিতির মাধ্যমে ডিমের দাম কত হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন। তাদের নির্ধারিত দামের বাইরে ডিম বিক্রির সুযোগ নেই।
সারা দেশে ডিমের দর কত হবে তা নির্ধারিত হয় রাজশাহী, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জ থেকে। প্রতিদিন সকালে ডিমের দর নির্ধারণ করে মোবাইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুদে বার্তায় সবাইকে জানিয়ে দেয় সংগঠনগুলোর হর্তাকর্তারা। দেশের সব এলাকায় আড়তদাররা ডিম সংগ্রহ করলেও এই তিন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করার কারণে এই তিন অঞ্চলের বাজার পর্যালোচনা করে ডিমের দাম ঠিক করা হয়।
তবে, আড়তদারদের দাবি, ডিমের বাজার চলে গেছে কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে। তারাই ক্রয় রশিদ দিচ্ছে না। করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও জানাচ্ছেন তারা। একটি ডিমে গুনতে হচ্ছে ১৪ টাকার বেশি একটি ডিমে গুনতে হচ্ছে ১৪ টাকার বেশি এ পরিস্থিতিতে, গত রোববার, ডিমের দাম না করলে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ডিম আমদানি করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চাইলে ডিমের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। ডিমের কত উৎপাদন হচ্ছে, বাজারে কত চাহিদা আছে, ঘাটতি কত- এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আমাদের কিছুই জানায়নি। এমনকি ডিমের উৎপাদন খরচ কত এবং কত টাকা দাম নির্ধারণ করা উচিত সেটাও তারা বলেনি। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি এসব তথ্য আমাদের দেয়, তবে বাজার বিশ্লেষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম আমদানির অনুমতি দেবে।’
একই দিন সচিবালয়ে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে খামারিদের সাথে বৈঠকে বসেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সভায় তিনি বলেন, ‘প্রতিটা ডিম উৎপাদনে সাড়ে ১০ টাকা খরচ হয়। ১২ টাকার উপরে কোন ভাবে দাম হওয়া উচিত নয়।’ ডিমে কেউ অনায্য লাভ করলে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান মন্ত্রী।
সভায় ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দাবি করেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিমের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘লোকসানের ভয়ে অনেকে পোল্ট্রি ব্যাবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। লম্বা সময় ধরেই উৎপাদন কমছে। বর্তমানে ৫ কোটি ডিমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৪ কোটি।’