খালিদ সাইফুল, কুষ্টিয়া থেকে: বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে সরকার একদিকে সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দূর্বৃত্ত চক্রের নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছে পাল্লা দিয়ে। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষ মেলা করছে, একই সময়ে শহর তলীর কুমারগাড়া এলাকায় প্রভাবশালী দূর্বৃত্তচক্র জিকে সেচ খালের দুই পাড়ের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক ফলজ ও বনজ গাছ নিধন উৎসবের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই গাছ নিধনে জড়িত স্থানীয় ২০নং পৌর কাউন্সিলর ও সেচ-সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া বিসিকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জিকে টি-৫ কে সেচখালের দুই পাড়ের প্রায় ২কিমি দীর্ঘ আয়তনের ফলজ ও বনজসহ প্রায় সাড়ে ৬ শতাধিক গাছ নির্বিচারে নিধন করেছে স্থানীয় প্রভাবশলী মহল। গাছ নিধনের এই উৎসবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ সম্প্রসারণ বিভাগের এক কর্মকর্তা ও স্থানীয় ২০ নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। গাছ নিধনকারীরা সহজ ও স্বল্প সময়ে এসব গাছ কাটতে ব্যবহার করেছে বৈদ্যুতিক করাত।
কুমারগাড়া খালপাড়ার বাসিন্দা মামুন জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে খাল পাড়ের গাছ কেটে ট্রলি লোড করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। যারা এসব গাছ কাটছে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালভার্ট থেকে শুরু করে পূর্বদিকে ১কি:মি: দূরত্ব পর্যন্ত দুই পাশদিয়ে কমপক্ষে ৬/৭শ গাছ ছিলো। লেবাররা কারেন্টের করাত দিয়ে দ্রæত সময়ের মধ্যে গাছগুলি কেটে ফেলেছে।
স্থানীয় যুবক রাকিবের দাবি, এই গাছ কাটার সিদ্ধান্তের সাথে আছে কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম, সেচ খালের সেচ সভাপতি বড়িয়া গ্রামের আব্দুল খালেক এবং জিকে সেচ বিভাগের আফজাল হোসেন। তাদের নেতৃত্বেই গাছগুলি কাটা হয়েছে।
তবে বাপাউবো কুষ্টিয়ার সহকারী সেচ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে গাছ কাটতে দেখে তাদের জিজ্ঞাসা করি যে আপনারা খাল পরিষ্কার করার কথা গাছ কাটছেন কেনো ? তখন ওরা বলে কই আমরা তো গাছ কাটিনি, মেশিনে যে দুই একটি ডাল আটকে যাচ্ছে সেগুলি কেটে দিয়েছি’। ‘তাছাড়া অন্যগাছগুলি কেটেছে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ নিজ বাড়ির সামনের গাছ কেটে নিয়েছে’ এভাবে কার্যত: তিনি গাছ কাটার পক্ষে ছাফাই গাইলেন।
একই ভাবে গাছ কাটার সাথে কোন ভাবেই জড়িত নয় দাবি করে কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০নং পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এজাজুল হাকিম বলেন,‘এইটার দায়িত্ব আমার না, এইটার সমিতি আছে, কে গাছ লাগাইছে, কে কাটেছে, এই সব বিষয় আমি জানিনা এবং আমার নেতৃত্বে গাছ কাটা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা’
কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে সপ্তাহব্যাপী চলমান বৃক্ষমেলায় আগত বৃক্ষপ্রেমী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিনথিয়া আমিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘বৈশি^ক উষ্ণায়নে পরিবেশ বিপর্যয় রুখতে একদিকে বৃক্ষ রোপন ও বনায়নে নানা কর্মসূচী চলছে অথচ এরই মধ্যে কেউ নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছে এটা কাম্য নয়। বৃক্ষ নিধন নয় বৃক্ষ রোপনই হোক সকলের মূলমন্ত্র’।
কুষ্টিয়া সামাজিক বনায়ন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবির বলেন,‘পরিবেশ ও জীবন বাঁচাতে বনায়ন ও বৃক্ষ রোপনের কোন বিকল্প নেই। এই অবস্থায় অবৈধ ভাবে কেউ বৃক্ষ নিধন করছে এমন সংবাদ পেলে সামাজিক বন বিভাগ সব সময়ই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে’।
বাপাউবো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান,‘স্থানীয় একটি দূর্বৃত্ত চক্র সেচ খালের উভয় পার থেকে বিভিন্ন জাতের গাছ কেটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে সত্যতা পাওয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে মডেল থানা পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি’।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা জানান, ‘টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রার সফল বাস্তবায়নে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সরকার বৃক্ষ রোপন ও বনায়নে দেশব্যাপী নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ-লক্ষ্যে কুষ্টিয়াতে সপ্তাহ ব্যাপী বৃক্ষমেলাসহ নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগকে ব্যাহত করতে কেউ গাছ নিধনে লিপ্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।