তার বয়স ১৭, নাম জান্নাতি আক্তার। এবার ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এরপরই তার জীবনে আসে এক বড় পরিবর্তন। দুই সপ্তাহের ধারাবাহিক পরিবর্তনে 'মেয়ে থেকে ছেলে' হয়ে গেলেন তিনি। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বড় গোড়দহ পাড়ায় এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে দুই সপ্তাহ আগে থেকেই তার শারীরিক পরিবর্তন ঘটলেও গত মঙ্গলবার ১ আগস্ট এ ঘটনা জানাজানি হয়। এরপর থেকেই এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হওয়া জান্নাতিকে একনজর দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমাচ্ছে তাদের বাড়িতে।
জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের সন্তান জান্নাতির বাবা জহুরুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক। তার মা শিল্পী বেগম একজন গৃহিণী। তাই পরিবারকে সহযোগী করতে নিজেই পড়াশোনা পাশাপাশি বাড়ির সামনে মুদি দোকান দিয়ে বসেছেন। তবে দরিদ্রতাকে জয় করে ছোট থেকে জান্নাতির স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার।
এদিকে জান্নাতির মা শিল্পী বেগম জানান, তার মেয়ে এবার উপজেলার গাবতলী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার তিনি তার মেয়ের শারীরিক পরিবর্তনের কথা জানতে পারেন। পরে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে দিনরাত মানুষ ভিড় করছে তাকে দেখার জন্য। এখন তার শারীরিক গঠন পুরুষের মতো। এ ছাড়া চেহারাতেও পরিবর্তন এসেছে। মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার পর তার নাম রাখা হয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস।
এ সময় মেয়ে থেকে ছেলে হওয়া জান্নাতি আক্তার বলেন, গত দুই সপ্তাহ পূর্ব থেকেই এমন কিছু ঘটছে বলে আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু লোক-লজ্জায় তখন কিছু বলতে পারিনি। এ নিয়ে আমি খুশি। আল্লাহ যা করেছেন ভালোর জন্যই করেছেন। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন ও সবাই সহযোগিতা করেছেন। সামনে আমার কলেজে ভর্তি হতে হবে। তাই আমি চাই নাম পরিচয় নিয়ে যেন কোনো জটিলতা তৈরি না হয়। বড় হয়ে আমি চিকিৎসক হয়ে আমাদের মতো গরীব মানুষদের সেবা করতে চাই। এজন্য বিত্তবানরা পাশে দাঁড়ালে স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে।
এ বিষয়ে গাবতলী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাদিদ হাসান শোভন জানান, এই খবরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সবাই আমরা বিষয়টিকে সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন ও স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছি। জান্নাতিকে স্থানীয়ভাবে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও সে অনেক মেধাবী তাই বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
এদিকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সুবা সাইয়ারা বলেন, নানা কারণে জেন্ডার ট্রান্সফরমেশন হতে পারে। এরমধ্যে হরমন জনিত কারণ অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমনটি খুব কম হলেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখন জান্নাতির জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।