এবার মৌসুমি বায়ু ও স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে ভরা পূর্ণিমার জোয়ার। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল; দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দিনভর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কিছু সড়কে। এমন বৈরী আবহাওয়ায় দুর্ভোগ তৈরি হলেও স্বস্তি ফিরেছে প্রকৃতিতে।
গত কয়েক দিনের ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে কাটছিল না গরম। অবশেষে গতকাল শ্রাবণের ভারী বৃষ্টিতে গরম কিছুটা কমেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশে এ বৃষ্টিবলয় থাকবে মাসজুড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার বার্তা তুলে ধরে। তাতে দেখা যায়, গতকাল রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা বাদ দিয়ে সব স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে।
সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৮৮ মিলিমিটার। রাজধানীতে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় এবং একটি স্থল নিম্নচাপ থাকায় এর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দু-তিন দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, পূর্ণিমা ও বায়ুচাপে পার্থক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল এমনিতেই রাজধানীর রাস্তায় লোক ছিল কম। তার ওপর বৃষ্টির কারণে অনেকেই টুকটাক প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ঘর থেকে বের হননি।
তবে যারা বেরিয়েছেন, তারা পড়েছিলেন চরম ভোগান্তিতে। এদিন জুমার নামাজের আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে অনেককেই ভিজে ভিজে মসজিদে যেতে দেখা গেছে। নামাজ শেষেও বৃষ্টি না থামায় মসজিদের ভেতরেই অপেক্ষা করেন অনেকে। কেউ আবার ছুটির দিনে বৃষ্টি উপভোগ করতে করতে বাসায় ফেরেন। বৃষ্টির কারণে অনেক সড়ক এবং গলিতে পানি জমে সমস্যা হয়েছে যান চলাচলে।
চট্টগ্রামে অবশ্য বৃষ্টি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার পর; যা গতকালও অব্যাহত ছিল। গতকাল সকালে বৃষ্টি বাড়তে থাকে। সকাল ৮টার দিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মূল সড়কে পানি জমে যায়। সকাল ৯টায় শুরু হয় দিনের প্রথম জোয়ার। এ সময় পানি নেমে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় জলাবদ্ধতা বাড়তে থাকে।
দুপুরের দিকে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, বাদুড়তলা, চকবাজার, ডিসি রোড, ফুলতলা, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, আরাকান রোড, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল সড়ক, তিন পোলের মাথা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। দুপুর ১২টার পর নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আরাকান রোডসহ কয়েকটি এলাকার পানি নামতে শুরু করে।
এদিকে ঝড়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে আল শাহ নামে ফিশিং বোট ডুবে চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের ১২ জেলে নিখোঁজের তিন দিন পর ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সন্দ্বীপ উপজেলার ৪ কিলোমিটার দূরে সাগরে পানির ট্যাঙ্ক ধরে ভাসমান অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন ভোলা জেলার দুটি মাছ ধরার বোট।