‘বাবাটা (ছেলে) রেজাল্ট দেখে যেতে পারল না। তার আগেই আমাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমার বাবাটা (ছেলে) খুবই মেধাবী ছিল।’ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন বাবা মোস্তফা জামান।
তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন শুক্রবার (২৮ জুলাই) প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু যখন পাসের উল্লাসে অন্যরা মেতে উঠেছে, ঠিক তখন দাফন শেষে মামুনকে সমাহিত করা হয় কবরে।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। কিন্তু এ সংবাদ জানার আগেই মারা যায় সে। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তশূন্যতা রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মামুনের।
আব্দুল্লাহ আল মামুন রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মা আরজিনা বেগম। দুই ভাইয়ের মধ্যে মামুন বড় ছিল। তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মুনতাসিরও রংপুর জিলা স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তার গ্রামের বাড়ি রংপুররে তারাগঞ্জ উপজেলার ডাংগিরহাট বামনদিঘি এলাকায়।
আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাবা স্কুল শিক্ষক মোস্তফা জামান জানান, অসুস্থতার কারণে গত ২৫ জুন মামুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে হিমোগ্লোবিন কম ছিল। একারণে রক্ত তৈরি হতো না। তাছাড়া আর কোনো রোগ ছিল না। আমরা আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বাইরের দেশে নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই ছেলেটা চলে গেল।
এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় তারাগঞ্জ উপজেলার ডাংগিরহাট বামনদিঘি গ্রামের খিয়ারদিঘি কবরস্থানে মামুনকে সমাহিত করা হয় মামুনকে।
রংপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক আল ইমরান জানান, মামুন খুবই মিশুক ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তার। এবারে ভালো ফলাফল করেছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সে রেজাল্ট জানতে পেল না।
তিনি আরও জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন রংপুর জিলা স্কুলে ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। ওর মৃত্যুর খবরে গোটা জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, কর্মচারীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সহপাঠী ইয়াসির আরাফাত জানান, বন্ধু হিসেবে মামুন অনেক ভালো ছেলে ছিল। হঠাৎ করে তাকে হারিয়ে আমরা সত্যি খুব কষ্ট পেয়েছি।
রংপুর জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাহিনা সুলতানা জানান, আমরা শোকাহত। আমরা একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারালাম। শিক্ষক হিসেবে অভিভাবক হিসেবে আমরা খুবই শোকাহত। মামুন ৩য় শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলে পড়ে। ছেলেটা চোখের সামনেই বেড়ে উঠল। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর দিনে আমাদের মাঝে আর নেই।