এবার ভারতের মণিপুরে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই ঘটনায় এবার মূল অভিযুক্ত হুইরেম হেরোডাস মৈতেইয়ের বাড়িতে আগুন দিয়েছে মৈতেই সম্প্রদায়ের নারীরা। পুলিশ জানায়, হেরোডাসের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে পেচি গ্রামের নারীরা মীরা পাইবিস বা ‘মহিলা মশাল বহনকারী’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর তারা অভিযুক্তের বাড়িতে যায় এবং ভাঙচুর শুরু করে এর এক পর্যায়ে তারা সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আন্দোলনকারী নারীদের মধ্যে মেইরা পাইবি নামে একজন বলেন, মেইতেই হোক বা অন্য সম্প্রদায়, একজন নারী হিসেবে, একজন নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের সমাজে এমন লোক থাকতে দিতে পারি না। এটা পুরো মেইতেই সম্প্রদায়ের জন্য লজ্জাজনক। এদিকে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবারেও মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে উত্তাল সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন।
দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ও আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদের দুই কক্ষ। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, বিআরএসসহ একাধিক বিরোধী দল সংসদে মণিপুর হিংসা ও নারী নিগ্রহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি দাবি করে হট্টগোল শুরু করে দেয়। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দুই কক্ষের অধিবেশনই মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, মণিপুরের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। মণিপুরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, মণিপুরের ঘটনা গোটা দেশকে লজ্জিত করেছে। আমি সর্বদলীয় বৈঠকেও বলেছিলাম, এখনও বলছি আমরা চাই মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক। কিন্তু বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী নয়।
বেশ কিছু বিরোধী দল ইচ্ছাকৃতভাবে সংসদে অশান্তি করছেন যাতে আলোচনা না হতে পারে। আমি অভিযোগ জানিয়েই বলছি, মণিপুরের পরিস্থিতিকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত, বিরোধীরা তা করছে না। এদিকে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ট্যাগ করে লেখেন, আপনি সংসদে মণিপুর নিয়ে বক্তব্য রাখেননি। যদি আপনি রেগেই থাকতেন, তবে কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে মিথ্যা তুলনা না টেনে প্রথমেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতেন।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পর মণিপুরের সাম্প্রতিক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে এবার মুখ খুলেছেন মণিপুরের ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিত ইরম শর্মিলা। সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের দুই নারীকে গণধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে প্রকাশ্যে হাঁটানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা করে শর্মিলা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি যথাসময়ে ঘটনার বিষয় হস্তক্ষেপ করতো, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না।
সম্প্রদায়, জাতি নির্বিশেষে এই ঘটনাকে অমানবিক আখ্যা দিয়ে দোষীদের প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। মণিপুরে প্রকাশ্যে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানোর ঘটনাটি ঘটে গত ৪ মে। ঘটনার প্রায় ৭৭ দিনের মাথায় একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়। এরপরই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। নির্যাতিতা নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।