হাজারো ঐতিহ্য বুকে ধরে এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে স-গৌরবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদার বাড়ির প্রতিটি দেয়ালের পরতে পরতে রয়েছে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। শানশওকত আর চাকচিক্যের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানকার রকমারি দেশী-বিদেশী ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারি পাতাবাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান আগন্তুককে একবার নয় বারবার এই সৌন্দর্য দেখার হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায়। তাছাড়া এখানকার সৌম্য-শান্ত কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আপনাকে দেবে এক অন্যরকম ভ্রমণের অনুভূতি।
ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি। ইতিহাস থেকে জানা গেছে আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। এই জমিদার বাড়ি ৫ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি বড় পুকুর। বাড়িটির সম্মুখভাগে চারটি সুবিন্যস্ত সিংহদ্বার সমৃদ্ধ চারটি বিশাল প্রাসাদ পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত সুদৃশ্যভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানে সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে প্রাচীন শিল্পের সুনিপুণ কারুকাজ।
বালিয়াটি জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জনৈক গোবিন্দ রাম সাহা। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি লবণের বণিক ছিলেন। জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকারের মধ্যে কিশোরীলাল রায় চৌধুরী, রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী তৎকালীন শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর পিতা এবং যার নামানুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়। বালিয়াটির জমিদাররা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে মানিকগঞ্জ বা সরাসরি সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। এছাড়া টঙ্গী অথবা উত্তরা থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি আসতে হলে আব্দুল্লাহপুর হয়ে নবীনগরে যাবেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে আপনি সরাসরি সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পেয়ে যাবেন। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা লোকাল সিএনজিতে করে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে।