দেশে বর্ষা এলেই ডেঙ্গু জ্বর মাথাচাড়া হয়ে ওঠে যেন। এই জ্বর হলো মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ, এর বাহক এডিস মশা। বর্ষায় এই মশার উৎপাত বেড়ে যায়। এবারে বর্ষার শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে দেশের ৬০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এটি। প্রতিদিনই কয়েক’শ রোগি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকাতেই মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৭৫০ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ১,৯৬৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৮২ জন। বর্ষা শুরু হতেই বেড়ে যায় মশার উপদ্রব। এর ফলে দ্রুত বাড়তে থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ।
ডেঙ্গুর উপসর্গ হলো- জ্বর, পেশি ব্যথা, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। তাই বর্ষার শুরু থেকেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন থাকুন কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে : মশা সবার আগে মানুষের শরীরের হাত আর পা টার্গেট করে। কারণ হাত-পা খোলা থাকে সবারই। তই বর্ষার মৌসুমে হাতাওয়ালা পোশাক পরুন। চেষ্টা করুন শরীর কাপড়ে আবৃত রাখার। ফুল প্যান্ট, ফুলহাতা শার্ট, জুতা ইত্যাদি দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে হবে।
ঘর বা বাড়ির আশেপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করুন। মশার বংশবিস্তারের আদর্শ স্থান হল জমে থাকা পানি। বৃষ্টির কারণে এ সময় জলাবদ্ধতা বাড়ে, ফলে মশার বংশবিস্তারের স্থানও বাড়ে। তাই ফুলের টব থেকে শুরু করে ড্রেন ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
মশা তাড়ানোর একটি কার্যকর এবং স্বাস্থ্যকর উপায় হলো মশা দূরে রাখে এমন গাছ ঘরে রাখা। তুলসি, সিট্রোনেলা, লেমনগ্রাস ইত্যাদি ঘরে মশা আসতে দেয় না।
ময়লা রাখার পাত্র পরিষ্কপার করুন প্রতিদিন। ব্যবহারের সময় ময়লার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়াও ঘরের কোণা, ছায়াবৃত স্থান, বাগান ইত্যাদিও নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
মশা তাড়ানোর স্প্রে, মলম ইত্যাদি ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ঘরে কিংবা বাইরে সবখানেই এগুলো ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে, শিশুদের ক্ষেত্রে এগুলো অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।
বর্ষার মৌসুমে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। আর জানালা খোলা রাখলেও নেট দিয়ে রাখতে ভুলবেন না। বিকেল থেকেই মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। তাই এ সময় ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখলে মশা ঢুকতে পারবে কম।
মশা দূরে রাখতে মৃদু কর্পূর, সরিষার তেলের সঙ্গে মেশানো ক্যারোম সিড বা আজওয়াই ইত্যাদি ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে কাজে লাগান। নিমের ও ল্যাভেন্ডার তেল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল ইত্যাদিও উপকারী।
বর্ষায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার বিকল্প নেই। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হলে, সব ধরনের রোগ থেকে নিস্তার পাবেন।