, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


ফরিদপুরে চার বছরেও শেষ হয়নি ১৮ মাসের ভবন নির্মাণ কাজ

  • আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৩ ০৩:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৩ ০৩:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন
ফরিদপুরে চার বছরেও শেষ হয়নি ১৮ মাসের ভবন নির্মাণ কাজ
নাজমুল হাসান নিরব, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় চার বছর আগে শুরু হয়। দেড় বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কক্ষ-সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকেরাও বসার জায়গা পাচ্ছেন না।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল ৩ কোটি ২৫ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পথর আওতায় চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হলে ফরিদপুরের মেসার্স রিয়াজ কর্পোরেশন এন্ড গোলাম মনসুর জেভি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। ২০১৯ সালের ৭ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ১৮ মাস। সে হিসাবে ২২ জানুয়ারি ২০২১ তারিখের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে অজুহাত দেখিয়ে গত ২০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবন নির্মাণের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পুরাতন ভবনের ৫টি শ্রেণীকক্ষ ভেঙে ফেলে। একারণে নির্মাণাধীন ভবনের পাশে টিন-শেডের জরাজীর্ণ একটি ভবনে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। নতুন নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনটির তিনতলার ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। শৌচাগার নির্মাণ হয়নি। দেয়ালে পলেস্তারা লাগানো হয়নি। রুমের জানালা নেই, দরজা নেই, ফ্যান নেই, প্রচন্ড গরম, শ্রেণীকক্ষের অভাব ও জরাজীর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে।

এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ঝড়-বৃষ্টি হলে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। এ কারণে অধিকাংশ সময় নিয়মিত পাঠগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শৌচাগার নির্মাণ না হওয়ায় আমরা খুব বিপদে আছি। তাই দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক ফরহাদ হোসাইন ফাহিম বলেন, ‘আমরা যেভাবে পাঠদান অব্যাহত রেখেছি তা একেবারেই অমানবিক। শ্রেণীকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা মাহফুজুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই ঠিকাদার বিরতি দিয়ে দিয়ে কাজ করছেন। আমরা ঠিকাদারকে দ্রুত ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য বার বার অনুরোধ করছি, তাতে কোন লাভ হয়নি। বর্তমানে যেসব শ্রেণীকক্ষে পাঠদান চলছে সেগুলো জরাজীর্ণ ও বেহাল অবস্থা। তাছাড়া শ্রেণীকক্ষ সংকটে গাদাগাদি করে একই কক্ষে অথবা খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা একাধিক বার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো সত্তে¡ও কোনো ফল মেলেনি। নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণকাজে দেরি হচ্ছে। মাঝে মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক আসে, একটু আধটু কাজ করে চলে যায়। অনেকটা লোক দেখানোর মতো।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যেসব শ্রেণীকক্ষে পাঠদান চলছে সেগুলো জরাজীর্ণ ও বেহাল অবস্থা। তাছাড়া শ্রেণীকক্ষ সংকটে গাদাগাদি করে একই কক্ষে অথবা খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষকদের বসার কক্ষটির অবস্থাও খুবই নাজুক। উপরের টিন ফুটা হয়ে আছে, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে বইপুস্তকসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামনে ঝড়-তুফানের মৌসুম ঝড় শুরু হলে যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে শিক্ষকদের বসার কক্ষটির।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, পশ্চিম বিভাগদী আব্বাসিয়া দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ অনেক দিন বন্ধ ছিল। স¤প্রতি কাজ শুরু করবে বলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে জানানো হয়।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াজ কর্পোরেশন এন্ড গোলাম মনসুর জেভির স্বত্বাধিকারী মো. রিয়াজ হোসেন শান্ত তার গাফলতির কথা স্বীকার করে বলেন, আমার পারিবারিক একটু সমস্যার কারনে ও বরাদ্দ সংকটের থাকায় কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।থ

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, ফান্ডে টাকার সংকট থাকায় কাজের ধীরগতি হয়েছে। তারপরেও আমরা দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। কাজটি দ্রুত শেষ করাতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
 
সর্বশেষ সংবাদ