আমিরুল ইসলাম, কামারখন্দ(সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: বাতাসে কাঁঠালের সু-ঘ্রান। পাকা কাঁঠালের গন্ধে ম ম করছে এলাকা । সকাল থেকেই সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের জামতৈল বাজারে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিয়ে আসা পাকা কাঁঠালগুলি শহরের প্রধান সড়কের এক পাশ দিয়ে বিক্রি করার জন্য লম্বা সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কাঁঠালের আকারভেদে এক একটি কাঁঠাল ১০-৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। আবার ক্রেতা কম থাকায় অনেকেই কাঁঠাল ভেঙ্গে বিনামূল্যে খাবারের জন্য আসেপাশের লোকজনকে বলাবলি করছে। এমন দুর্দাশায় অনেক বিক্রেতার জাতীয় এই ফলটি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
গত বুধবার এবং বৃহস্পতিবার সকাল দুপুর পর্যন্ত জামতৈল বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শতাধিক কৃষক বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁঠাল এনে সারি করে সাজিয়ে রেখেছেন। অথচ বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া ক্রেতার দেখা নেই।
কাঁঠাল ব্যবসায়ী ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই জামতৈল বাজারে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার ধারে বাড়ীর আশে পাশে কৃষকের উৎপাদিত কাঁঠাল বেচাকেনা হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস আম-কাঁঠালের মৌসুম। বাজার এখন পরিপক্ব কাঁঠালে সয়লাব। আগে এই সময় কাঁঠালের পাশাপাশি পাইকারে বাজার জমজমাট থাকলেও এ বছর অবস্থা অনেকটা ভিন্ন।
স্থানীয় ফল ব্যবসায়ীদের মতে গত ১৫ দিন ধরে প্রতিদিন বাজারে গড়ে কাঁঠাল জমায়েত হয়। কিন্তু সমতলের পাইকার এখনো আসেনি। ফলে দামও কম। যে কাঁঠাল বিগত সময়ে ৫০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ৫০ টাকায়!
কৃষক আবদুল মজিদ এবং দোহা তালুকদার বলেন, এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন অনেকটাই বেশি বিক্রি না হলে বিপদ ঘটাবে। পচনশীল ফল বলে একে গাছে রাখার সুযোগ নেই। এ ছাড়া এই অঞ্চলে হিমাগারও নেই। বাজারে কাঁঠালের আমদানির তুলনায় ক্রেতা অনেকটাই কম অনেকে কাঁঠাল বিক্রি করতে না পেরে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন অথবা বিনে পয়সায় কাউকে দিয়ে দিচ্ছেন । এতে কৃষকের লোকসানের ঘানি টানতে হতে পারে।
এ সময় স্থানীয় পাইকার জামাল উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কাঁঠালের উৎপাদন সব অঞ্চলেই বেশি। এ কারণে দেখা যাচ্ছে বাজারে ক্রেতা কম অন্যদিকে প্রচন্ড গরম এই গরমে অনেকে কাঁঠাল খেতে চাচ্ছে না আমরা বিভিন্ন শহরে কাঁঠাল নিয়ে গেলেও সেটা সঠিক দামে বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে রাস্তা খরচ, বাজার টোল ও গাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে তেমন লাভ থাকছে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্যান প্রসাদ পাল দৈনিক কালবেলা' কে বলেন, কামারখন্দ উপজেলায় কাঁঠালের বাগান না থাকলেও মুগবেলাই, ভদ্রঘাট, জামতৈল এই অঞ্চলের প্রত্যেকের বাড়িতে কমপক্ষে দুইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত কাঁঠাল গাছ লাগানো আছে যেখানে এক একটি কাঁঠাল গাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ টা পর্যন্ত ধরে আছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে আবহাওয়াটা উষ্ণ থাকায় কাঁঠালের উৎপাদন অনেকটাই বেশি।
তিনি আরো বলেন কাঁঠাল অত্যন্ত উপকারী একটা ফল। কাঁঠাল প্রায় শতভাগ ব্যবহারের যোগ্য। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পাকা অবস্থায় মানুষ খায় এবং এর অবশিষ্ট অংশ গরুর খাদ্য হিসেবে ভালো । কাঁঠাল অনেকে গরমের কারণে খেতে চায় না কিন্তু কাঁঠালের কোষ থেকে রস বের করে এটা যদি ফ্রিজআপ করা যায় তাহলে এই কাঁঠালের রস থেকে বিভিন্ন ধরনের মুখোচক খাবার তৈরি করা যায় যেমন রুটি, লুচি এবং বড়া অথবা কাঁঠালের চিপস কেউ যদি চায় এইভাবে সংরক্ষণ করে অফ মৌসুমে এটার ব্যবহার করতে পারে এবং এটার পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য অত্যন্ত ভালো।