১৬ বছরের ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজারের বেশি রান নিয়ে আজ হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তার এই অবসরের সিদ্বান্তে অবাক হয়েছেন তামিমের সতীর্থরাই। মুশফিকুর রহিম-লিটন দাসরা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন।
কিন্তু যার কাছ থেকে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্বের ভার নিয়েছেন, সেই মাশরাফি বিন মর্তুজা কিছুক্ষণই আগে তামিমকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তামিমকে কিংবদন্তি বলে অভিহিত করে নিজের ভেরিফাইড পেইজে ম্যাশ লিখেছেন, ‘তামিম, তোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই একান্ত তোর। এটা কারও ভালো লাগলেও তোর, ভালো না লাগলেও তোর।
পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হবে। তবে সবচেয়ে ভালো কোনটা, সেটা তুই ছাড়া কেউই ভালো বুঝবে না। তাই তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি ব্যক্তিগতভাবে শতভাগ সম্মান জানাই।
তবে কিছু কথা জানতে মন চায়, মাত্র ৩৪ বছর ১০৮ দিনেই বিদায় কেন! আসলেই কি চালিয়ে যেতে পারছিস না? না কি কোনও চাপ তোকে বাধ্য করেছে!
তোর অনেক ভক্ত হয়তো খুঁজে ফিরবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আজ খুঁজবে, এমনকি ভবিষ্যতও আরও অনেকদিন খুঁজবে।
তোকে প্রথম দেখেছি চট্টগ্রামে তোদের বাসায়, হাফ প্যান্ট পরে খেলছিলি। তোর ভাই, আমার বন্ধু নাফিস ইকবাল তোকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরেরবার দেখলাম জাতীয় লীগে ওপেন করতে, খুলনার মাঠে। তারপর ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথ চলতে চলতে তুই হয়ে গেলি বন্ধুর মতো। কত দিন কত রাত এক সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে খেতে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, তর্ক, খেলা নিয়ে কত কত আলোচনা করেছি, সেসবের কোনও হদিস নেই।
যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন তুই ছিলি আমার অন্যতম ‘স্নাইপার।’ সেটা তুই নিজেও খুব ভালো করেই জানিস। যেদিন দল থেকে বের হয়ে এলাম, সেদিন তুই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলি। পরে সারারাত একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলাম। যে কোনও সিরিজ বা সফরে তুই ছিলি আমার রুমে আড্ডার অবধারিত সঙ্গী। আরও কত শত স্মৃতি এখন মনে পড়ছে!
তোকে যতটুকু চিনি, তাতে তোর এই সিদ্ধান্তকে আমি অনায়াসে পোস্টমর্টেম করতে পারতাম। কিন্তু তা করব না, কারণ ওই যে, তোর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত।
তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি, সেই সঙ্গে এটাও বলছি যে, তুই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যা কিছু দিয়েছিস, তা আমরা আজীবন মনে রাখব। একজন তামিম হয়ে উঠতে কতটা পরিশ্রম, কতটা সময়, কতটা মেধা আর কত ত্যাগ থাকতে হয়, তা সময় সব কিছু বুঝিয়ে দেবে।
তোর প্রতি রইল অফুরন্ত ভালোবাসা। পরবর্তী জীবন পরিবার নিয়ে দারুণ কাটাবি, সেই আশাই করছি।
আর একটা কথা, দলের ভেতর নানা পরিসংখ্যান নিয়ে বিশ্লেষনধর্মী আলোচনা এখন কে করবে, ঠিক জানি না। হয়তো কেউ করবে। তবে তুই এই জায়গায় সবসময়ই থাকবি সেরাদের সেরা।
গুড বাই মি. তামিম ইকবাল খান। একজন কিংবদন্তীর বিদায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে চলুক দুর্বার গতিতে। আমাদের এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।