এবার ফিফা দ্য বেস্টের লড়াইয়ে লিওনেল মেসির কাছে হেরে শিরোপা খুইয়েছিলেন পিএসজি সতীর্থ ও ফ্রান্সের অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফিফা এককভাবে বর্ষসেরা পুরস্কার দেয়ার পর এটি ছিল মেসির দ্বিতীয় ট্রফি। আর ব্যালন ডি’অর ও ফিফা দ্য বেস্ট মিলিয়ে এটি সপ্তম বর্ষসেরা পুরস্কার। এরপর আবারো মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ এসেছিল কাতার বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট ও একই ক্লাব সতীর্থ মেসি ও এমবাপ্পের সামনে। মেসি সেই লড়াইয়ে টিকে থাকলেও আস্তে আস্তে রেস থেকে ছিটকে যাচ্ছেন এমবাপ্পে।
বিশ্বকাপ শেষে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ২০২৩ সালে ব্যালন ডি’অর শিরোপা জয়ের রেসে ছিলেন মেসি-এমবাপ্পে। সকলে তখন মনে করেছিলেন দ্য বেস্টের মতো লড়াইটাও হবে কাতার বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টের মধ্যে। কিন্তু সেখান বাগড়া দিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান সুপারস্টার আর্লিং হালান্ড। এ ট্রফিটির জন্য এমবাপ্পের পরিবর্তে হালান্ড এখন মেসির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার ব্যালন ডি’অর পাওয়া যে কোনও খেলোয়াড়ের জন্যই সম্মানজনক। যদিও এ ট্রফিটি মেসি সাত বার শোকেসবদ্ধ করেছেন। তাই তার কাছে এর গুরুত্ব কম মনে হতে পারে। তবে এমবাপ্পে কিংবা হালান্ডের জন্য এটি বিশেষ কিছু। সম্প্রতি চলতি মৌসুমের ব্যালন ডি’অর জয়ের পাওয়ার র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট গোলডটকম।
যেখানে দেখা যাচ্ছে শীর্ষ পাঁচের লড়াইয়ে চলছে তুমুল প্রতিযোগীতা। শীর্ষ তিনে বেশ রদবদল হয়েছে। আগের তালিকায় মেসির পর এমবাপ্পের অবস্থান হলেও নতুন প্রকাশিত তালিকায় মেসির পরের স্থানটা নিয়েছেন হালান্ড। এক ধাপ পেছনে গিয়ে তিনে অবস্থান এমবাপ্পের। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে শীর্ষ পাঁচে। আগের তালিকায় ১৩তম স্থানে থাকা শেষ ব্যালনজয়ী রিয়াল তারকা করিম বেনজেমা এক লাফে চলে এসেছেন পাঁচ নম্বরে। আর আগের র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থাকা আরেক রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ঢুকে গেছেন শীর্ষ চারে।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেরা ফুটবলারের হাতে তুলে দেয়া হবে ২০২৩ সালের ব্যালন ডি’অরের ট্রফিটি। যেটি ৬৭তম ব্যালন ডি’অর ট্রফি। মৌসুমের এখনো ২ মাস বাকি। এখনই আলোচনায় কার হাতে উঠবে ব্যালন ডি’অর। ব্যালন ডি’অরের এবারের ট্রফিটি নিজের করে নিতে হালান্ড সামনে এবার রয়েছে বড় সুযোগ। কেননা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ইতোমধ্যে পিএসজি বাদ পড়েছে। অন্যদিকে তার দল ম্যানসিটি সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
তাই দুর্দান্ত ফর্ম দিয়ে যদি দলকে প্রথমবারের মতো শিরোপা পাইয়ে দিতে পারেন তাহলে সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় তার হাতেই যাবে এবার ব্যালনের শিরোপা। তবে হালান্ডকে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের জন্য রিয়াল পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। কেননা সেমিফাইনালে যে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী টুর্নামেন্টের রেকর্ড শিরোধারী গ্যালাক্টিকোরা। এখন পর্যন্ত রেকর্ড ১৪ শিরোপা রিয়ালের। এবারেরটি জিতলে হবে ১৫তম শিরোপা।
তাই তো ম্যানসিটির গোলমেশিনকে আগে রিয়াল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তারপর গিয়ে তার পরীক্ষাটা হবে বিশ্বকাপজয়ী মেসির সঙ্গে। হালান্ডের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি হতো না, যদি না ২০২২ সালের ব্যালন ডি’অরের সময় ফ্রান্স ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পরিবর্তন না আনত। আগে যেখানে একবছর হিসেবে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ধরা হতো, সেখানে এবার ক্যালেন্ডার ইয়ার করা হয়েছে জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত।
আর এ কারনেই মেসি ব্যালন ডি’অর জয়ে হালান্ডের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কেননা নতুন সময়ে মেসি ফুটবলের সবচেয়ে বড় শিরোপা ফুটবল বিশ্বকাপ জয় করেছেন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ব্যালন ডি’অরের পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে মেসি ৩৬ গোল ও ২৩টি অ্যাসিস্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছেন। তার ব্যালন ডি’অর জয়ে যে বিষয়টি এগিয়ে রাখছে তা হলো ফুটবল বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ থেকে করেছেন ৭ গোল সেই সঙ্গে করিয়েছেন ৩ গোল।
আর ফাইনালের ম্যাচ সেরাসহ বিশ্ব আসরে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৫ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার। যা তাকে অষ্টম ব্যালন ডি’অরের জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে রাখছে। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে চলতি মৌসুমে ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়ন শিরোপা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানসিটির আর্লিং হালান্ডও আছেন চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে। তিনি এখন পর্যন্ত ৪৮ গোলের পাশাপাশি করেছেন ৬ অ্যাসিস্ট। তবে তার দুঃখ বিশ্বকাপ মঞ্চে তার দেশ নরওয়ের সুযোগ না পাওয়া।
তাই তো হালান্ড চলে এসেছেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। যেখানে আগে ছিলেন এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতলে ব্যালনের ট্রফি তার হাতে যাবে এটা বলা যায় একবাক্যে। তৃতীয় স্থানে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৪৩ গোল ও ১২টি অ্যাসিস্ট করেছেন। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও শিরোপা ঘরে তুলতে না ব্যর্থ তিনি। তবে ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ পুরো টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচ থেকে ৮ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ২ গোল। আর ম্যাচ সেরা হয়েছেন ৪টিতে।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তরুণ সেনসেশন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২২ গোল ও ২০ অ্যাসিস্ট করেছেন। জিতেছেন ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা। তার দল রিয়াল মাদ্রিদ পৌঁছে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে। যেখানে প্রতিপক্ষ ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি।
পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকা করিম বেনজেমা। তিনি একলাফে ১৩ থেকে পাঁচে এসে ঢুকেছেন। চলতি মৌসুমে করেছে ২৬টি গোল। কপাল খারাপ থাকায় খেলতে পারেননি কাতার বিশ্বকাপ। পরে অবশ্য জাতীয় দল থেকেই অবসরে চলে যান। ইতোমধ্যে চলতি বছরে রিয়ালের হয়ে জিতেছেন ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ও উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা।
এই পাঁচজন ছাড়াও শীর্ষ ২০ এ রয়েছেন যারা- ভিক্টর ওসিমেন (নাপোলি), কাভিচা কোয়ারাটশেলিয়া (নাপোলি), কেভিন ডি ব্রুইনা (ম্যানচেস্টার সিটি), মার্কাস রাশফোর্ড (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), রবার্ট লেভানদোভস্কি (বার্সেলোনা), কাসেমিরো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), ব্রুনো ফার্নান্দেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), নিকোলো বোরেল্লা (ইন্টার মিলান), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জামাল মুসিয়ালা (বায়ার্ন মিউনিখ), জুড বেলিংহাম (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), মাইক মেইগনান (এসি মিলান), মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল) ও জ্যাক গ্রিলিশ (ম্যানচেস্টার সিটি)।