, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ , ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


কুরবানীর গোশত বিতরণ গরীবরা কি আসলেই পাচ্ছেন?

  • আপলোড সময় : ২৭-০৬-২০২৩ ০৩:২০:১৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০৬-২০২৩ ০৩:২০:১৩ অপরাহ্ন
কুরবানীর গোশত বিতরণ গরীবরা কি আসলেই পাচ্ছেন? ফাইল ছবি
মো: সাইমুন ইসলাম, কুয়াকাটা পটুয়াখালী প্রতিনিধি : আমরা কুকুরদের খাওয়ানোর জন্য কুরবানী দিচ্ছি না তো? দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে কুসুমের মা কুসুমের বাবাকে বললেন, আমি তো পিঁয়াজ মরিচ কেটে রেখেছিলাম, কেউ তো গোশত পাঠালো না! প্রতিবেশীরা আমাদের কথা ভুলে গেলো না তো ? আপনি কি একটু গিয়ে দেখবেন?
 
কুসুমের বাবাঃ তুমি তো জানো আজ পর্যন্ত কারো কাছে আমি হাত পাতিনি আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কোন না কোন ব্যবস্থা করে দেবেন। দুপুরের পর পীড়াপীড়িতে বের না হয়ে পারলেন না। প্রথম গেলেন বড় সাহেবের বাড়ীতে। বললেন,বড় সাহেব! আমি আপনার পড়শী। কিছু গোশত দেবেন ?

গোশত চাইতেই বড় সাহেবের চেহারা গোস্বায় লাল হয়ে গেল। তাচ্ছিল্যের সাথে বললেন, কি জানি কোত্থেকে গোশত চাইতে চলে আসে-বলেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। অপমানে কুসুমের বাবার চোখে পানি চলে আসলো। ভারী পায়ে চলতে চলতে এবার গেলেন মিঁয়া সাহেবের ঘরের দিকে, দরজায় করাঘাত করে বিনীতভাবে কিছু গোশত চাইলেন। মিঁয়া সাহেব গোশতের কথা শুনেই বিরক্তিভরে তাকালেন, পলিথিনে কয়েক টুকরো গোশত দিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিলেন। যাক ছোট মেয়েটাকে তো একটা বুঝ দেয়া যাবে, এমনটা ভাবতে ভাবতে কুসুমের বাবা ঘরে ফিরে এলেন। ঘরে ফিরে পলিথিন খুলে দেখলেন শুধু দুটো হাড্ডি আর চর্বি।

চুপচাপ রুমে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। এরই মধ্যে ছোট কুসুম বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, বাবা ! গোশত লাগবে না। আমি গোস্ত খাবো না, আমার পেট ব্যাথা করছে। মেয়ের একথা শুনে বাবা আর চাপা কান্না ধরে রাখতে পারলেন না।

এমন সময় বাইরে থেকে সবজি বিক্রেতা আকরাম ভাই ডাক দিলো। কুসুমের বাপ ঘরে আছেন ? কুসুমের আব্বু দরজা খুলতেই আকরাম ভাই তিন- চার কেজি গোশতের একটি ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল, গ্রাম থেকে ছোট ভাই নিয়ে এসেছে। এতো গোশত কি একা খাওয়া সম্ভব, বলেন? এটা আপনারা খাবেন। আনন্দ আর কৃতজ্ঞতায় কুসুমের বাবা ভেজা চোখ মুছতে লাগলেন। অন্তর থেকে আকরামের জন্য দোয়া করতে লাগলেন। গোশত রান্না করে সবাই মজা করে খেয়ে উঠতে না উঠতেই প্রচন্ড তুফান শুরু হলো। বিদ্যুৎও চলে গেল। সারাদিন গেল, এমনকি দ্বিতীয় দিনও বিদ্যুৎ এলো না তুফানে ট্রান্সমিটার জ্বলে গিয়েছিলো ।
কুসুমের বাবা তৃতীয় দিন কুসুমকে নিয়ে হাঁটতে বের হলেন। বাবা-মেয়ে দেখলো,
বড় সাহেব ও মিঁয়া সাহেব গোশতে ভরা অনেকগুলো পোঁটলা ডাস্টবিনে ফেলছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে থাকা সব গোশত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফেলে দেয়া পঁচা গোশতের উপর একদল কুকুরকে হামলে পড়তে দেখে কুসুম বলল, বাবা তারা কিকুকুরদের খাওয়ানোর জন্য কুরবানী করেছিলেন ?

পাশ থেকে মিঁয়া সাহেব ও হাজী সাহেব ছোট মেয়েটির কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললেন।

হ্যাঁ, এটিই আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষের বাস্তবচিত্র। আমরা যেন মিঁয়া সাহেব আর বড় সাহেবদের মতো না হই। লাইনে দাঁড় করিয়ে নয় বরং (সম্ভব হলে) অভাবীদের ঘরে ঘরে কুরবানীর গোশত পোঁছে দেই। 

আমাদের দেশে বিত্তের বন্টন অসম। উন্নয়নশীল এই দেশের সিংহভাগ মানুষ চোখের সামনে দেখতে পায় গ্রামের,পাড়ার কিংবা পাশের ফ্ল্যাটের আরেকজন সম্পদশালী মানুষ দুইহাত ভরে খরচ করছে। আজ টিভি তো কাল ফ্রিজ তো পরশু পাকা বাড়ি করছে। ছেলে মেয়ের জন্যে ইচ্ছেমতো জামা কাপড় কিনছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না এমন স্বাচ্ছন্দ পূর্ণ জীবন যাপন করা। আমার গাড়ির জানালায় টোকা দিয়ে মলিন মুখে সাহায্য চাওয়া বর্ষীয়ান মানুষটার চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারিনা আমি অনেক দিন হলো। তাকালেই নিজেকে মনে হয় অন্যায় রকম ভালো আছি আমি। 

মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বয়সের হাত পেতে থাকা মানুষদের আমি খুব গভীরভাবে দেখি। শ্রদ্ধার চোখেই দেখি। প্রায়ই ভাবি আমার অতীত কিছুটা অন্যভাবে লিখা হলে হয়তো আজ আমিও এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার পরিবার এর স্বাচ্ছন্দের জন্যে মানুষের কাছে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতাম। খুব বেশি ড্রামাটিক মনে হলেও এমনটা কিন্তু হতেই পারতো। আমি ভাগ্যবান যে তা হয়নি। ব্যক্তি পর্যায় থেকে এই বিশাল সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। একার পক্ষে হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য করা অসম্ভব। দেশের অর্থনীতির উন্নতি নাহলে কখনোই এতো বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। রাষ্ট্রকে এর দায়িত্ব নিতেই হবে। একটা ষাট বছর বয়সী অসুস্থ নারী বা একটা ৪ বছর বয়সী শিশু দুপুরে কড়া রোদে শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষের কাছে হাত পেতে যাচ্ছে কয়েকটা টাকার জন্যে ,স্যার দেন না কয়েকটা টেকা দেন না বলে বলে গলা শুকিয়ে কাঠ করে ফেলছে, বারবার প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, তারপরও হাত পেতে যাচ্ছে।পেটের দায়ে হয়তো ভুয়া অপারেশন এর সনদ দেখাচ্ছে কিংবা অন্য কোনো অজুহাত দেখাচ্ছে, কিন্তু অনেকেই সেটা করছে নিরুপায় হয়ে। 
 
আমাদের অর্থনীতি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে যথেষ্ট কর্মসংস্থান করতে পারেনি বলেই তারা আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্যের করুণা চাইছে। দূর দূর করে তাড়িয়ে না দিয়ে শ্রদ্ধার চোখে একবার হাসি দিয়ে বললেই ওদের অনেকটা কষ্ট কমে যাবে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের কাছে করুণা চাওয়ার আগে নিজের আত্মসম্মানের শেষ অংশটুকুও ফেলে আসে দূরে কোথাও। আমরা যারা এমন অসম বিত্তের দেশে আর্থিক ভাবে ভালো আছি তাদের প্রতি একটাই অনুরোধ আমার যারা এখনো সামান্যতম আর্থিক মুক্তি পাননি তাদেরকে যেন অন্তত শ্রদ্ধার চোখে দেখি আমরা। মানুষকে যেন মানুষই মনে করি আমরা।
আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে উত্তম বিনিময় পাওয়ার আশায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমস্ত নেক আ'মল গুলো কবুল করুন। আমাদেকর ভুল-ত্রুটিগুলো যেন মাফ করে দেন- আমিন।
সর্বশেষ সংবাদ
সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি হেফাজতের

সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি হেফাজতের