৪৫০ টাকা কেজি দরে খামারে থেকে গরু বিক্রি করছেন আব্দুল মতিন আজিজ নামের এক খামারী। তার ফার্মের নাম ‘জমজম ক্যাটল ফার্ম’। রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জের দেওয়ানটুলি এলাকায় মতিনের গরুর খামারে ওজনে বেচাকেনা হচ্ছে কুরবানির পশু। গত দুই বছর ধরে এই পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এই খামারি।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সরজমিনে খামার ঘুরে এই তথ্য জানা যায়। খামারি আব্দুল মতিন আজিজ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই খামারে আগ্রহী ক্রেতারা আসছেন এবং গরু দেখছেন। পছন্দ হলে ওজন স্কেলে উঠিয়ে পরিমাণ দেখে খামারেই গরু রেখে যাচ্ছেন। ঈদুল আজহার এক দিন বা দুই দিন আগে গরু নিয়ে যাবেন। আসন্ন কুরবানির ঈদের জন্য ১২০টি গুরু প্রস্তুত করা হয়েছে এই খামারে। ওজনে গরু বেচাকেনায় ক্রেতাদের বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ক্রেতারা বলছেন, ঝক্কি-ঝামেলা মুক্ত এবং ফ্রেশ গরু কিনতেই ছুটছেন এমন খামারে। তারা বলছেন, ওজন স্কেলে গরু বেচাকেনায় সুবিধা অনেক। ওজন স্কেলে গরু মেপে বেচাকেনার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ঠকে যাওয়ার চিন্তা নেই। বাজেট অনুযায়ী সুস্থ-সবল পশু কিনতে পারছেন তারা।
জমজম ক্যাটল ফার্মে গরু কিনতে আসা ফজলুর রহমান বলেন, বেশ কিছু হাটে ঘুরেছি। এখনও পছন্দসই গরু কিনতে পারিনি। এ কারণে খামারে এসেছি। ওজনে মেপে পছন্দমতো গরু কেনার পদ্ধতিটি আমার ভালো লেগেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার উদ্দেশ্য এবং নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহ সবকিছুই জানেন। কুরবানির উদ্দেশ্য থেকে গরু কিনতে এসেছি। যদি পছন্দ হয় কিনব ইনশাআল্লাহ।
খামারি মতিন জানান, হাট থেকে গরু কিনতে গেলে ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, দূরদূরান্ত থেকে আসা গরুকে স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কিনা এটা গরু দেখে বোঝার উপায় নেই। তাই ক্রেতারা দেখে-শুনে গরু নিতে আসছেন খামারে।
এই পদ্ধতিতে গরু কিনে কুরবানি করা যাবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মনে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। যদিও খামার মালিক আব্দুল মতিন আজিজের দাবি তারা ইসলামি শরিয়াহ অনুসরণ করে গরু বিক্রি করছেন।
আজিজ বলেন, খামারে থাকা সব গরু শাহিওয়াল জাতের। এসবের জন্য ফিড ও নিয়মিত দেশি খাবারের পাশাপাশি পরিচর্যার কোনো কমতি নেই। একেকটার ওজন ও আকৃতি একেক রকম। এই গরুগুলো লালনপালন করে ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ আসছেন, গরু দেখে পছন্দ হলে তারপর কিনছেন। এসব গরু দেশি ও প্রকৃতি নির্ভর খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। এ কারণে দেখতেও অনেক স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী। প্রতিদিন কেউ না কেউ আসছেন।
এই খামারি জানান, ইতোমধ্যে যেসব গরু বিক্রি হয়েছে, সেগুলো তার খামারেই রয়েছে। এসব গরুর খাওয়া, দেখাশোনা এবং ঈদের আগে ক্রেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সব খরচ খামার থেকে ব্যয় করা হবে। কোনো গরুকে ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা হয়নি। যারা গরু কিনেছেন তাদের গরুর শরীরে একটি নম্বর লেখা রয়েছে, যাতে সহজেই চেনা যায়।
রংপুর প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশু বিক্রির উদ্দেশ্যে এ বিভাগের আট জেলায় দেড় লাখের বেশি খামারি প্রায় পাঁচ লাখ গরু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া দুই লাখ গৃহস্থ প্রায় ৯ লাখ গরু ও খাসি বাজারে বিক্রি করার জন্য তৈরি করেছেন। এর মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৩ হাজার খামারে দুই লাখের বেশি গরু রয়েছে।