এবার কলেজ পড়ুয়া চাচাতো বোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক। অতঃপর প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন দিনমজুর মো. মিজান মোল্যা (২৩)। তবে শত স্বপ্ন নিয়ে ঘর বাঁধলেও, বাবা-মায়ের অমতে বিয়ে করায় সংসারে ছিলোনা সুখ। তাইতো বিয়ের নয় মাসের মাথায় বিচ্ছেদ হল এ দম্পতির। অতঃপর বিচ্ছেদের খুশিতে ২০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করেছেন তিনি। গতকাল বুধবার ২১ জুন বিকালে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে। মিজান মোল্যা রুদ্রবানা পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
জানা যায়, মিজান মোল্যার সাথে ৯ মাস আগে মুসা মোল্যার মেয়ে নূরজাহান আক্তারের (২২) বিয়ে হয়। তারা প্রেম করে বিয়ে করলেও বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বিবাদ মেটাতে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশও হয়। এর মধ্যে দুই মাস আগে স্ত্রী নূরজাহান নারী ও শিশু আদালতে নির্যাতন ও যৌতুকের মামলা করেন। পরে স্বামী মিজান বিচ্ছেদের একটি মামলা করেন।
এলাকাবাসী জানান, প্রায় নয় মাস আগে বাবা-মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে চাচাতো ভাই-বোন উভয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের দু'মাস পর মেনে নেন তাদের পরিবারও। প্রথম দিকে তাদের দাম্পত্যজীবন সুখেই চলছিল। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর সংসারে শুরু হয় কলহ। বনিবনা হচ্ছিল না তাদের।
জানা যায়, দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর একই গ্রামের ইলিয়াস মোল্লার দিনমজুর ছেলে মিজানুর মোল্লা ও প্রতিবেশী মোশারফ মোল্যার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নূরজাহান আক্তার উভয়ে প্রেমের টানে ঘর ছাড়া হয়। পরে এই যুগল পালিয়ে গিয়ে ছেলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের পিতা মাতার মতের বিরুদ্ধে তার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তবে, বিবাহের দু'মাস পর মেয়ে পক্ষ তাদের বিবাহ মেনে নেয়।
প্রথম দিকে তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখেই চলছিল। কিন্তু, বিয়ের দু'মাস পরেই তাদের সংসারে কলহ শুরু হয়ে যায়। কারণ, ছেলে অশিক্ষিত আর মেয়ে এইএসসি পাস করে ডিগ্রীতে লেখাপড়া করে। শিক্ষিত বউ হওয়ায় দরিদ্র কৃষক পরিবার তার মোটেও ভাল না লাগায় সংসারে কোন কাজকর্ম করেন না মেয়ে; ভাত রান্না করে ছেলের মা ছেলের বউকে সময় মতো খেতে না দিলেই শুরু হয় ঝগড়া বিবাদ।
এভাবে কেটে যায় আরো কয়েকটি মাস। অবশেষে বউ তার স্বামীর নিকট একটি শর্ত জুড়ে দেন সেটি হলো তার পিতা-মাতার সাথে একসঙ্গে থাকা যাবে না; তাকে নিয়ে সংসার করতে হলে পৃথক হয়ে খেতে হবে। বউয়ের শর্তের বিষয়টি স্বামী তার পিতা-মাতাকে জানালে ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে তাদেরকে পৃথক করে দেওয়া হয়। তবে সেটিতেও বউয়ের মন গলেনা বরং সব সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। একপর্যায়ে মেয়ের পিতা-মাতা তার মেয়েকে নিয়ে আদালতে যৌতুকের দাবিতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মিজানের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে এ ঘটনা নিয়ে একাধিকবার বিচার-সালিশও হয়। দুই মাস আগে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু আদালতে নির্যাতন ও যৌতুকের অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এরপর মিজানও বিচ্ছেদ চেয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। পাল্টাপাল্টি মামলা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের আদেশ দেন আদালত।
গতকাল বুধবার ২১ জুন দুপুরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বাড়িতে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। সেখানে তাদের বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিয়ে বিচ্ছেদের খুশিতে বাড়ি ফিরে ২০ কেজি দুধ দিয়ে গোসল করেন মিজান। এ ব্যাপারে দুধ দিয়ে গোসল করা মিজান মোল্যা বলেন, 'বিয়ের তিন মাস পর থেকেই সংসারে অশান্তি বাড়তে থাকে। সে আমার নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম স্ত্রীর হাত থেকে মুক্তি পেলে আধা মণ দুধ দিয়ে গোসল করবো। সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করলাম।'
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গার বানা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য বাবর আলী বলেন, এই দম্পতি সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন ছিলেন। প্রেমের সম্পর্কের পর নয় মাস আগে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর দুই পরিবার তাদের মেনে নেয়। কিন্তু এরপরই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। বুধবার দুপুরে উভয়পক্ষের সম্মতি ও পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের খোলা তালাক হয়। বৃহস্পতিবার তাদের খোলা তালাকের কাগজ আদালতে জমা দেওয়া হবে।