, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫ , ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি" বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া

  • আপলোড সময় : ২৫-০১-২০২৫ ০৬:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৫-০১-২০২৫ ০৬:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি" বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া
মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের মান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। দেশের অন্যতম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ থাকলেও শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডে তার কোনো প্রতিফলন নেই। আধুনিকতার ছোঁয়া তো দূরের কথা, আইডি কার্ডের মান অত্যন্ত সাধারণ ও নিম্নমানের হওয়ায় এটি শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, আইডি কার্ড প্রাপ্তির প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং ভোগান্তিপূর্ণ। কার্ড তৈরির দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন। তবে, তারা দাবি করে যে, ৫০ থেকে ১০০টি কার্ড জমা না হলে অর্ডার দেওয়া সম্ভব হয় না। এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার শিকার হতে হয়।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ভর্তির সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একত্রিত করে সহজেই আইডি কার্ড তৈরি করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও আধুনিক করার দাবি জানিয়েছেন তারা। 

আইডি কার্ডের অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে। এটি শুধু পরিচয়পত্র নয়, বরং ক্যাম্পাসে প্রবেশ, গ্রন্থাগার ব্যবহার, পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশগ্রহণসহ অনেক ক্ষেত্রেই অপরিহার্য। সঠিক সময়ে মানসম্মত আইডি কার্ড প্রদানের গুরুত্ব তাই অনস্বীকার্য।

বর্তমান প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে আলাদা আলাদা কার্ড ব্যবহারের পরিবর্তে একটি স্মার্ট আইডি কার্ড এর মাধ্যমে সকল সুবিধা প্রদান করা সম্ভব। স্মার্ট আইডি কার্ডে সংযুক্ত থাকতে পারে:
পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার যা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় নিশ্চিত করা; লাইব্রেরিতে বই ধার নেওয়া বা অন্যান্য সুবিধা পাওয়া;  ক্লাশ বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণে উপস্থিতি নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ, স্কলারশিপ আবেদন বা বিশেষ সেবা গ্রহণ করা; পরিবহন, ক্যাফেটেরিয়ার, বই বা ফটোকপির দোকানে ডিসকাউন্ট পাওয়া; ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় ব্যবহার করা; কর্মশালা, সেমিনার বা ইভেন্টে অংশ নিতে আইডি কার্ড ব্যবহার করা; বাইরের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগত সফর বা ইন্টার্নশিপের সময় ব্যবহার করা;  আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভিসা আবেদন বা প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রমাণে ব্যবহার করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/প্রফেসরের সঙ্গে  বিশেষ সাক্ষাৎ বা সময় নিতে ব্যবহার করা; ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগারে প্রবেশ; অনলাইন কোর্স বা অ্যাকাডেমিক রিসোর্সে এক্সেস ব্যবহারসহ একাধিক কাজ করা যায়। তবে মাভাবিপ্রবিতে এই সুযোগ নেই। এটি শিক্ষার্থীদের জীবনকে সহজ করবে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা আনবে। তাই সময়মতো উন্নতমানের স্মার্ট আইডি কার্ড প্রবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. পিয়াসুর রহমান হিসাম বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড কার্যকারিতা বলতে গেলে প্রায় নেই। এটি শুধু পরিচয় শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়, অথচ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটিকে আরও কার্যকরী করা সম্ভব। বর্তমানে আইডি কার্ডে কেবল ছবি ও নাম দেওয়া থাকে। তবে, যদি এই কার্ডকে ক্যাম্পাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, লাইব্রেরি সেবা, ক্লাস রেজিস্ট্রেশন এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেত, তাহলে এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি উপযোগী হতো।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির অভাব অত্যন্ত প্রকট। এখনও ক্লাস রেজিস্ট্রেশন, ভর্তি কার্যক্রম এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ ম্যানুয়ালি পরিচালিত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব প্রক্রিয়া ডিজিটাল করা হলে সময়, শ্রম এবং সম্পদের অপচয় অনেক কমানো সম্ভব হতো। দুঃখজনক হলো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক হলেও প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে। গবেষণা কার্যক্রমও কার্যত স্থবির। রিসার্চ সেন্টার থাকা সত্ত্বেও তা কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না।”
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “আইডি কার্ডে ব্লুটুথ বা QR কোড প্রযুক্তি সংযুক্ত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রবেশ, ক্লাসে উপস্থিতি, লাইব্রেরি সেবা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও সহজ ও কার্যকরী করা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।”

কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র একটি শিক্ষার্থীর পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রযুক্তিনির্ভর এই আধুনিক যুগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মার্ট আইডি কার্ড চালু করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “স্মার্ট আইডি কার্ডে আধুনিক চিপ সংযুক্ত থাকলে এটি শুধু পরিচয়পত্র হিসেবেই নয়, বরং বহুমুখী সুবিধা প্রদানকারী একটি ডিভাইস হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা, ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার, বাস সার্ভিস, এমনকি ক্যাফেটেরিয়ার বিল পরিশোধও সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া স্মার্ট কার্ড শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও সহজতর করে তুলবে। বিশ্বের অনেক উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে স্মার্ট আইডি কার্ড ব্যবহার শুরু করেছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এটি শিক্ষার্থীদের আরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
ইমরান হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আশাবাদী, প্রশাসন স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আধুনিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করবে।”

স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিকল্পনা জানতে চাইলে  শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম বলেন, "শুধুমাত্র আমাদের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্মার্ট আইডি কার্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও একাডেমিক তথ্য একত্রিত রাখতে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সুবিধার সুরক্ষিত ও সহজলভ্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নয়ন, ডেটা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যতে ধাপে ধাপে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
রমজান মাসের প্রথম ১০ দিনে রেকর্ড আড়াই কোটি মুসল্লি দেখেছে পবিত্র কাবা

রমজান মাসের প্রথম ১০ দিনে রেকর্ড আড়াই কোটি মুসল্লি দেখেছে পবিত্র কাবা