লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা নতুন চর কানিবগার চরে কৃষকদের জমি দখলে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। শুক্রবার রাতে নীজেদের জমি বুঝিয়ে নিতে ওই দুই সাবেক চেয়ারম্যানসহ বিএনপির ২০ জন নেতার বিরুদ্ধে ১০ জন কৃষক পৃথকভাবে রায়পুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। শুধু এসব চরের জমিই না, চরবংশী ইউপির মোল্লারহাট বাজার, খাসের হাট বাজার, উত্তর চরআবাবিল ইউপির হায়দরগন্জ ও ক্যাম্পের হাট বাজারে গরু, পান, কাঁচাবাজার ও মাছ ঘাটও দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।।
এছাড়াও সোমবার দুপুরে দুই শতাধিক কৃষক রায়পুর থানার সামনে সরকার থেকে পাওয়া এক হাজার দুইশত ৯২ শতক জমিতে যেন বিএনপির নেতারা প্রবেশ করতে না পারে এতে বিক্ষোভ, মানবন্ধন ও প্রতিবাদসভা করেন।
রায়পুরের মেঘনার নতুন চরকানিবগা গ্রামের কৃষক শাহআলমসহ ১০ কৃষকের পৃথক করা অভিযোগগুলোতে আসামি করা হয়েছে উত্তর চরবংশী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক আহবায়ক মোস্তফা গাজি, দক্ষিন চরবংশী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির আহবায়ক হারুন হাওলাদার, সদস্য সচিব মোবারক মাস্টার, বিএনপি নেতা বাদশা গাজি, শামিম গাজি ও ফারুক কবিরাজসহ স্থানীয় ২০ জন নেতা-কর্মী।
সোমবার (২০ জানুয়ারী) কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুইয়া জানান, যেসকল কৃষকের দলিল আছে, তারাই চরের জমি ভোগদখল করবেন। তবে-সকলের জমির দলিল রায়পুর হায়দরগন্জের বাসিন্দা তাহের ইজ্জুদ্দিনের কাছে কৃষকদের দলিল জমা দিবেন। ২-৩দিনের মধ্য সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভুইয়া ও ওসিসহ ৮-১০ জনের কমিটি করা হয়। তারাই দলিল দেখে সিদ্ধান্ত দিবেন।।
উল্লেখ্য- দুই হাজার ৭০০ একরের বিশাল চরাঞ্চল বিগত ১৮ বছর রায়পুর- বরিশালের গোবিন্দপুর ও হাইমচর উপজেলার সীমানা পর্যন্ত আ'লীগের নেতাদের দখলে ছিল মেঘনা নদীর বিশাল চরটি। বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির বিএনপির নেতারা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে গোপনে ভূমিহীনদের কাছ থেকে ইজারা হিসেবে প্রতি একরে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করেছে।
কৃষক লিটন হোসেন বলেন, ভূমিদস্যু, লাঠিয়াল বাহিনীর নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোস্তফা গাজী, হারুন হাওলাদার, মোবারক মাষ্টার, শামীম গাজী, বাদশা গাজী, ফারুক কবিরাজের নেতৃত্বে তাদের অনুসারীরা ১২৯২ (বারশত বিরানব্বই) একর ভূমি যাহার বরিশাল আদালতের রায়, ঢাকার সুপ্রিমকোর্টের রায়, এস্ট্রে অর্ডার, লক্ষ্মীপুর ভূমি কমিশন রিপোর্ট, চরকানি বগার গেজেট রিপোর্ট ও লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের অর্ডার এবং মালিকপক্ষের রায়পুর সহকারী আদালতের নিষেধাজ্ঞায় একটি মামলা চলমান রয়েছে, (যার নং ৪০/২০০২ ও ৪১/২০০৩) মামলাগুলো থাকা সত্বেও ভূমিদস্যু, লাঠিয়াল এবং সন্ত্রাসীরা প্রকৃত মালিকদের ১ হাজার ২৯২ একর ভূমি জবর দখল করতে না পারে । এজন্যই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদসভা ও মানবন্ধন করা হয়।
এর পরে বিএনপির নেতাদের বিচার চেয়ে সেনা ক্যাম্পের অভিযোগ দেয়।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ৫ আগষ্ট উত্তর চরবংশী ইউপির সাবেক বিএনপির আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা গাজি, তার ভাতিজা উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব শামিম গাজি, দক্ষিন চরবংশী ইউপির বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ হাওলাদার, বাদশা গাজি, কৃষকদলের সাধারন সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহাগসহ তাদের অনুসারীকর্মীদের নিয়ে নতুন কানিবগার চরে জমি দখল করেন।
তবে বিএনপি নেতা মোস্তফা গাজী ও হারুন হাওলাদার বলেছেন, গত ১৮ বছর ভূমিদস্যু সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ মাস্টারসহ ক'জন আ' লীগ নেতাদের দখলে ছিলো চরের সরকারি খাস জমিগুলো। এসব জমি এখন উদ্ধার করে প্রকৃত মালিকদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা।
রায়পুরের উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউপির চরঘাসিয়া, টুনুর চর, নতুন চর কানিবগা, চর কাচিয়া গ্রামের বাসিন্দা শাহআলম, মাহমুদ আলী, জয়নাল আবেদিন ও ফারুক হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরে বসবাস করছে ভিটেমাটি হারানো কয়েক হাজার পরিবার। এসব লোকজন চরের অনাবাদি জমি চাষাবাদ করে আবাদি করে তুলছেন। কিন্তু সরকারের খাস জমি গত ১৮ বছর অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনসহ তার অনুসারীরা। চরাঞ্চলের এসব জমিতে ভূমিহীনদের সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে একশ্রেণির অসাধু ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে দলীয় ও প্রভাবশা লী বিএনপি নেতারা নিজেদের দখলে রাখছে।
উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মামুন জানান, সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে তারা পালিয়ে যাওয়ার পর এখন প্রভাবশালী একটি চক্র মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে এসব চরে ২ হাজার ৭০০ একর সরকারি খাস সম্পত্তি দখলে প্রভাবশালীদের।’
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুর রহমান ভুঁইয়া জানান, রায়পুরের চরাঞ্চলের খাস জমি দখলের সাথে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী জড়িত নেই। আওয়ামী লীগের জবর দখলদাররা বিএনপির সুনাম ক্ষুন্নের জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় দল নেবে না। বৈধ কাগজপত্রধারীরা জমি ভোগ করবে এটা তাদের অধিকার। আমরা তাঁদের অধিকারকে সম্মান জানাই বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই।
রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, ‘শুধু মেঘনার বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরের কৃষকদের জমি প্রভাবশালীরা দখলে নেয়। দশ জন কৃষক পৃথকভাবে দুই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তা দলিল দেখে তদন্তপুর্বক ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।।