এবার আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ মামলার আসামি। এই মামলার শুনানিতে সাবেক এই মন্ত্রীসহ ১৬ জনকে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে যখন তাকে প্রিজনভ্যানে ওঠানো হচ্ছিল তখন তিনি হাসতে হাসতে গাড়ির দিকে যান। এ সময় ট্রাইব্যুনালের সামনে থাকা উপস্থিত কয়েকজন তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শাহজাহান ভাই কেমন আছেন’। এর প্রতি উত্তরে আওয়ামী লীগের এই নেতা তাদের সালাম দেন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে এ চিত্র দেখা যায়।
আজ দুপুর একটার দিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে শাহজাহান খানকে দুইজন পুলিশ সদস্য তার দুই হাতে ধরে বের করে নিয়ে যান প্রিজনভ্যানের সামনে। প্রিজনভ্যানে হেঁটে যাওয়ার সময় শাহজাহান খান তার ডান পাশে থাকা এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে উচ্চস্বরে হাসাহাসি করে কথা বলছিলেন। এই মুহূর্তে ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থিত কয়েকজন প্রশ্ন করে ‘শাহজাহান ভাই কেমন আছেন’। এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে শাহজাহান খান তাদের সালাম দিয়ে হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে যান। এরপর শাজাহান খানসহ আরও কয়েকজন হেভিওয়েট আসামিকে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে প্রিজনভ্যানটি।
এর আগে সকালে জুলাই-আগস্টে ‘হত্যা-গণহত্যার’ মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ মোট ১৬ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।
এরপর গত ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১৮ নভেম্বর সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।