এবার পাকিস্তানের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু হলেও এর পরের তিন ম্যাচে ভারত কোনো প্রতিপক্ষকেই পাত্তা দেয়নি। জাপান আর সংযুক্ত আরব আমিরাত তো ধারে-ভারেই ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে, সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকেও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সে পথে আইপিএলে দল পেয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ১৩ বছরের কিশোর ভৈবভ সুরিয়াভানশি ব্যাট হাতে ঝড় তুলছিল। দুবাই স্টেডিয়ামে আজ ফাইনালে তাই বাংলাদেশের সামনে ভারতকে বড় হুমকিই মনে হচ্ছিল। ভারত টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়েছে ঠিকই, বাংলাদেশও কী কম গেছে নাকি! গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে শেষ ম্যাচে হারলেও তার আগেই আফগানিস্তান আর নেপালকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ, এরপর সেমিফাইনালে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। ফাইনালে আজ যখন ভারত এল প্রতিপক্ষ হয়ে, ব্যাট হাতে ১৯৮ রান তোলা বাংলাদেশ বল হাতে ভারতকে পাত্তাই দেয়নি!
সুরিয়াভানশি নিজেও কিছু করতে পারেনি, আউট হয়ে গেছে ৯ রান করে। তার দলের কোনো ব্যাটসম্যানও ৩০-এর ঘরে যেতে পারেনি, ২০-এর ঘরে গেছেন ৪ জন, এর বাইরে দুই অঙ্কেই যেতে পেরেছেন আর একজন। শেষ পর্যন্ত ১৩৯ রান করেই গুটিয়ে গেছে ভারত। ৫৯ রানে জিতে টানা দ্বিতীয় এশিয়া কাপ ঘরে নিয়ে এল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। গত বছর এই দুবাই স্টেডিয়ামেই আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। শিহাব জেমস (৪০) ও রিজান হোসেনের (৪৭) দুটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস আর উইকেটকিপার ফরিদ হাসানের ৩৯ রানের সৌজন্যে বাংলাদেশ দুই শ-র কাছাকাছি স্কোর যখন গড়ে, তখনই মনে হচ্ছিল, ভারতের কাজটা সহজ হবে না।
টুর্নামেন্টজুড়ে যে বাংলাদেশের পেসারদের দাপট দেখা গেছে! দুই ডানহাতি পেসার ইকবাল হোসেন ইমন আর আল ফাহাদ তো টুর্নামেন্টেরই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি দুই বোলার – ইমনের উইকেট ১৩টি, ফাহাদের ১২টি। টুর্নামেন্টে উইকেটের সংখ্যায় দুই অঙ্কে যাওয়া বোলার শুধু এ দুজনই। এর পাশাপাশি ঝলক দেখিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধা (৫ উইকেট) আর আরেক ডানহাতি পেসার রিজানও (৬ উইকেট)। আজও ইমনের সামনেই ধসে পড়েছে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ভারতের মিডল অর্ডার! দ্বিতীয় ওভারে আল ফাহাদ ফেরান ভারতের ওপেনার আইয়ুশ মাহাত্রেকে (১), পঞ্চম ওভারে বড় উইকেট – সুরিয়াভানশিকে আউট করেন মারুফ। ভারতের রান তখন ২৪। তৃতীয় উইকেটে ২০ রানের একটা জুটি হলো, সিদ্ধার্থকে (২০) ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন রিজান। এরপর শুরু হলো ইমনের খেল!
চতুর্থ উইকেটে আবার ২৯ রানের একটা জুটি পায় ভারত, ২১তম ওভারের তৃতীয় বলে কার্তিকেয়াকে (২১) ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন ইমন। এর এক বল পরই নিখিল কুমারকেও আউট করেন তিনি। নিজের পরের ওভারে এসে ফেরান হারভানশ পাঙ্গালিয়াকে। ইমনের ধাক্কায় ভারতের স্কোর ৭৩/৩ থেকে দেখতে না দেখতেই হয়ে যায় ৮১/৬। ইমনের তিনটি উইকেটই একই ঢংয়ে – উইকেটের পেছনে ফরিদের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য হয়েছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা!
সেই যে কোমর ভাঙল ভারতের, আর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল না তারা। দলের স্কোর ১০০ হওয়ার আগে কিরান চরমালেকেও হারায় ভারত, ২৭তম ওভারে তাঁকে ফেরান ফাহাদ। তখন শুধু ভারতের হারের ক্ষণ গণনা চলছে। পাঁচে নেমে এক প্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়া দেখতে থাকা ভারত অধিনায়ক আমানের সঙ্গে মিলে নয়ে নামা হার্দিক রাজ শুধু সেটিকে একটু দীর্ঘায়িত করলেন, এই যা! সেই অপেক্ষার শেষ হলো বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল হাকিমের বল হাতের ঝলকে। ভারতের হয়ে ওপরের দিকে সিদ্ধার্থ-কার্তিকেয়া আর অধিনায়ক আমানের (২৬) বাইরে হার্দিকই যা রান করেছেন।
অষ্টম উইকেটে আমান-হার্দিকের ২৩ রানের জুটি ভাঙে ৩২তম ওভারে, ভারত অধিনায়ক আমানকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল। এর এক ওভার পর হার্দিকও ফেরেন হাকিমের বলে! ভারতের স্কোর তখন ১২৪/৯, বাংলাদেশ আর শিরোপার মধ্যে ব্যবধান শুধু একটি উইকেট। ৩৬তম ওভারে ভারতের হয়ে দুই অঙ্কে যাওয়া পঞ্চম ব্যাটসম্যান চেতন শর্মাকে (১০) আউট করে সে অপেক্ষার শেষ টেনে দেন আজিজুলই! উইকেটের উদ্যাপন? নাহ, তার আর তখন সময় কোথায়! তখন তো সময় শিরোপার উদ্যাপনের!