এবার বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়নের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার অভিযোগ তুলে ভারতীয় বিভিন্ন নেতাদের আপত্তিকর বিবৃতি ও মন্তব্যের মধ্যে সবশেষ শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) এই মন্তব্য করেন তিনি।
বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শান্তির জন্য যে মানুষটাকে নোবেল দেয়া হয়েছিল তিনি তার নিজের দেশেই শান্তি শৃঙ্খলার বজায় রাখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। তিনি কি আদৌ সেসব কিছু করতে পারছেন? হাস্যকর নানা বিবৃতি দিচ্ছেন। তার মতে, নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়া হবে কিনা তা নিয়ে আমি মতামত দেয়ার কেউ না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাংলাদেশের এই ঘটনার পর এ রকম একটা মানুষকে কেন নোবেল দেয়া হয়েছিল সেটাই প্রশ্ন। এটা মেনে নেয়া যায় না।
তার দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে খুব ভালোবাসতেন ওপার বাংলার মানুষেরা। আমি নিজে ওখানে গিয়েছি। আমার পরিবারের লোকরা ওখানে ছিল। কিছু মৌলবাদী লোক ইচ্ছাকৃতভাবে এই সন্ত্রাস তৈরি করছে। এর প্রতিবাদ করতেই হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক হিমশীতল অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন নতুন করে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেও টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে।
ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ভারতের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) ত্রিপুরার আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ থেমে যায়নি।
ঘটনার একদিন পর ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে ক্ষোভ জানায় ঢাকা। গত বুধবার এক সংক্ষিপ্ত নোটিশে ত্রিপুরার অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ, কলকাতার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনার সিকদার মো. আশরাফুল রহমানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের পরিবর্তিত পরিস্থিতি আলোচনার জন্য অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের ঢাকায় ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার নোটিশে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবারই ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন তারা।
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ভারতও গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছে। এ ছাড়া হামলার ঘটনায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারত এবং তিন পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে। এ ছাড়া কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনে ভারতীয়দের জন্য বাংলাদেশের ভিসা সীমিত করেছে ঢাকা। দুই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন শক্ত পদক্ষেপ নিলো বাংলাদেশ।
আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া না হলেও বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) গোপন এক দাপ্তরিক চিঠির মাধ্যমে কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনকে বাংলাদেশ সরকারের তরফে ভারতীয়দের ঢালাও ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে সেই নির্দেশ কার্যকরও শুরু করেছে করেছে কলকাতা দূতাবাস।