সাকিব আল হাসান ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নাম লেখিয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়। রেস্টুরেট, চিংড়ি-কাঁকড়ার ঘের, স্বর্ণ এমনকি শেয়ার বাজারেও নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। তবে শেয়ার ব্যবসায়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে সাকিবের বিরুদ্ধে। এই ব্যবসায়ে কারসাজির মাধ্যমে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করে এখন ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে সাকিব ও তার মা শিরিন আকতারকে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ জরিমানা করেছে। সাকিবের কারসাজির বিস্তারিত তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক ও তার মায়ের নামে পরিচালিত একটি যৌথ বিও হিসাবে একটি বিমা কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচায় কারসাজি করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির নাম প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে সংঘটিত কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন সাকিব। শেয়ারবাজারে যে বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) ব্যবহার করে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়, সেটি সাকি ও তার মা শিরিন আকতারের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাকিব, শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরুসহ কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে।
মূলত গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা তদন্ত করে ডিএসই। এতে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় বেরিয়ে আসে। তদন্তে দেখা যায়, এক মাসে বাজারে প্যারামাউন্টের প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৩৫ টাকা বা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে সিরিজ লেনদেন বা নিজেদের মধ্যে হাতবদল করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবুল খায়ের হিরু, সাকিব আল হাসানসহ তাদের নিকটাত্মীয়, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
এদিকে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সাকিব ও তার মা শিরিন আকতারসহ সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। ডিএসইর তদন্ত ও বিএসইসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাকিব ও তার মায়ের বিও হিসাবে মাত্র তিন দিনে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার কেনা হয়। এসব শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২৪ পয়সা। এ জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
গত বছরের ১২, ১৪ এ ১৭ সেপ্টেম্বর ভিন্ন ভিন্ন দামে এসব শেয়ার কেনা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার শেয়ার কেনা হয় ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। এই দুই দিনে কেনা সব শেয়ারই পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিক্রি করে দেন সাকিব। তাতে প্রতি শেয়ারে প্রায় ৯ টাকা করে মুনাফা হয়। সব মিলিয়ে মুনাফা দাঁড়ায় ৯০ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটির আরও ৪০ হাজার শেয়ার অবিক্রীত ছিল সাকিবের বিও হিসাবে। তাতে ওই শেয়ারে আনরিয়ালাইজড বা অনর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, কারসাজির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মাত্র পাঁচ দিনে বড় অঙ্কের মুনাফা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজারে সাকিব সরাসরি লেনদেন করতেন না। তার বিনিয়োগ ও লেনদেন দেখভাল করতেন শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু। প্যারামাউন্ট শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় সাকিবের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএসইসির পক্ষ থেকে সাকিবকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সাকিবের পক্ষে সেই শুনানিতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আবুল খায়ের হিরু।