এবার সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা রোধে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ১৯৭২-এ বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, সংবিধানের মালিক জনগণ। তাই তাদেরই এই দায়িত্ব নিতে হবে। সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে ১৯৭২ এর সংবিধান দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন স্তরের আইনজীবীরাও।
ড. কামাল হোসেন বলেন, লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিসত্তা, রাজনৈতিক বা অন্য যে কোনো পরিচয়ের কারণে বৈষম্য হতে দেয়া যাবে না। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সব সাংবিধানিক সংস্কার আমাদের করতে হবে। তার মতে, ‘জনগণ ক্ষমতার মালিক। কেউ ভুল করলে তা নাগরিকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা সংবিধানে থাকতে হবে। সংবিধানকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভুল ব্যাখ্যা করলে তা ধরিয়ে দিতে হবে।’
সভায় বক্তারা দাবি করেন, ‘সরকার বরাবরই আদালতকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে। আদালত সংবিধান রক্ষায় ব্যর্থ।’ সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে আদালত অতীতেও কাজ করেছে, এখনও করছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘সংবিধান নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে তা দেশকে সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সংবিধান নিয়ে যে বিতর্ক আসছে, তা আমাদের সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি নির্বাচনের জন্য কালো মেঘ দেখছি। এখন সংবিধান কিছু করলে অ্যাপ্রুভ করবে কে? এসব আলোচনা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চাই, কথায় নয় কাজে। ব্যক্তিস্বার্থে কিংবা দলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করলে তা টেকে না।’
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শাসকের ইচ্ছায় সংবিধান পরিবর্তিত হয়েছে। জনগণের ইচ্ছায় নয়। সংবিধান সংশোধিত হলে সংবিধানে কিছু পরিবর্তন দরকার। যেমন- প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় হবেন না রাষ্ট্রপতি, জনগণ নির্বাচন করবে। একই প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদের বেশি থাকতে পারবেন না।
তার মতে, ‘অনির্বাচিত সরকার সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ করতে পারে, সরাসরি সংস্কার করতে পারে না।’ আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, “যেভাবে দিবস বাতিল করছে, এটা আমরা মানতে পারছি না। কদিন পর মুক্তিযুদ্ধও বাতিল করে দেবেন। অতীতের সব মুছে দেয়া চলবে না, সংবিধান দিবস অক্ষুন্ন থাকবে। ১০ এপ্রিল ‘রিপাবলিক ডে’ ঘোষণা করতে হবে।”
ইতিহাস মুছে দিতে চাইলে ‘আপনাদেরও অস্তিত্ব থাকবে না’ বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।