এবার জামিন না পেয়েও ভারতের কারাগার থেকে ছাড়া পেলেন বিচারাধীন এক বাংলাদেশি বন্দি। জানা গেছে ওই বাংলাদেশি বন্দি আওয়ামী লীগের যুব নেতা। ইতিমধ্যেই তার খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা সামনে আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বনগা থানার পুলিশ। স্ক্যানারে আনা হয়েছে বনগাঁ আদালতের জেনারেল রেকর্ড (জিআর) সেকশনের এক কর্মকর্তাকে। বারাসত জেলা আদালত তো বটেই, অনভিপ্রেত এই ঘটনার খোঁজখবর শুরু করেছে কলকাতা হাইকোর্টও।
জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ধরা পড়ে বাংলাদেশের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার দিননগরের বাসিন্দা যুবলিগ নেতা খলিল খালাসি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে খুনের অভিযোগ রয়েছে। খলিলকে অবৈধভাবে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রমে সহায়তা করার অভিযোগ গ্রেপ্তার করা হয় অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক ভারতীয় দালালকেও।
এরপর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (এসিজেএম) নির্দেশে উভয়কেই ১৪ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে (জেল হেফাজত) পাঠানো হয়। আগামী ৪ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য ছিল। সেদিন খলিলের আদালতে হাজির হওয়ার কথা।
এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার অভিজিতের তরফে বনগাঁ মহকুমা আদালতে জামিনের আর্জি জানানো হলে, তা মঞ্জুর হয়। রাত হয়ে যাওয়ায় পরদিন বুধবার সকালে অভিজিতের আইনজীবী মনোজ কুমার সাহা গিয়ে জানতে পারেন তার মক্কেলের জামিনের নির্দেশের রিলিজ অর্ডারের কপি বনগাঁ মহকুমা কারাগারে পৌঁছায়নি। বরং তার অপর মক্কেল খলিল খালাসি নামে ওই বাংলাদেশির রিলিজ অর্ডার কারাগারে পৌঁছানোয় কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
এ বিষযটি জানতে মহকুমা আদালতের জিআর সেকশনে পৌঁছান অভিজিতের আইনজীবী। নথি ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়, অভিজিতের রিলিজ অর্ডারের কপি রয়ে গিয়েছে আদালতেই। অথচ অপর একটি রিলিজ অর্ডার তৈরি করে শুনানির আগেই জামিন পাইয়ে দেয়া হয়েছে খলিলকে।
এদিকে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হওয়ার পর এসিজেএম (বনগাঁ) দেবাশিস পাঁজার স্বাক্ষর সম্বলিত আরেকটি রিলিজ অর্ডার তৈরি করে সংশোধনাগার থেকে বের করা হয় অভিজিৎকে। কিন্তু কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না খলিল খালাসির।
ওই মামলার খলিল ও অভিজিৎ এর যৌথ আইনজীবী মনোজ সাহা। তিনি বলেন কিভাবে এত বড় ভুল হলো তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন এসিজিএম। আমরা খলিলের পরিবারের সাথে কথা বলেছি তারাও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা কোন বিরোধী শক্তি খলিলকে জেল থেকে বের করিয়ে তাকে গুম বা অন্য কিছু করল কিনা।
তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে সোচ্চার হয়েছেন বনগাঁ আদালতের আইনজীবী ল'ক্লার্ক সংগঠনের সদস্যরা। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বনগাঁ আদালতের আইনজীবীদের অভিযোগ, এই আদালতে অর্থের বিনিময়ে নানা অনিয়ম হচ্ছে। রুপি দিলেই কোর্ট লকআপ থেকে ফোনে কথা বলছে আসামিরা।
এদিকে বনগাঁ ল'ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস বলেন, আমার ৩৬ বছরের আইনি পেশায় এ রকম ঘটনা এই প্রথম। যেখানে জামিন হলো না বেল বন্ড জমা পড়লো না। অথচ একজন আসামি কারাগার থেকে শুনানির আগেই রিলিজ পেয়ে গেল। এমনকি তার আইনজীবীও জানেন না! এর মধ্যে বড় চক্রান্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন খলিল পালিয়ে যায়নি, তাকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। অথচ এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুন করা হলো নাকি তাকে অপহরণ করা হলো কিছুই বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্যরা খুব চিন্তায় রয়েছেন।