প্রতিদিনই বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণে ডিম ভারত থেকে পাঠানো হলেও ঢাকা কেন নয়াদিল্লিকে ইলিশ পাঠাচ্ছে না, এমন প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক ব্যবসায়ী। যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গেল ১০ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। আগামী দুই মাসে আরও ৪৭ লাখ ডিম আমদানি করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে দেশটিতে। মাত্র চার বছর আগেও এই উৎপাদনের হার ছিল ৬৫ শতাংশ। ইলিশ উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশও বর্তমানে বাংলাদেশকে ইলিশ উৎপাদনের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে। গত ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ইলিশ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। তবে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বদলে যায় ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তভিত্তিক আমদানি-রপ্তানির চিত্র। আগের বছরগুলোতে পূজার সময় উপহার হিসেবেও ইলিশ গেছে বাংলাদেশ থেকে। তবে এ বছর সে সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশেষ স্বাদের এই মাছ পাওয়ার বিষয়ে আপাতত আর আশার আলো দেখছেন না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা। গত দশকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন কড়াকড়ি ছিল না।
তবে ২০১২ সাল থেকে চিত্রটি বদলায়। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ভারতে ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশ রপ্তানি কার্যত বন্ধই ছিল। ২০১৮ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তির ফলে ফের ভারতে ইলিশ পাঠাতে রাজি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেই থেকে প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ সরকার এক মাসের জন্য ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়। মাছ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, মাসে গড়ে এক হাজার থেকে ১২'শ মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করতে পারতেন তারা। খাতা-কলমে এটাকে ‘পূজার উপহার’ হিসেবে ধরা হতো।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন ইলিশ চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর না পাওয়ার কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হাওড়া শাখার সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, তারা ফের চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে ইলিশ মাছ পাঠানোর জন্য অনুরোধ করবেন। তবে সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে, পদ্মার ইলিশ এবার আদৌ আসবে কি না, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।