গত ১৯৪৭ বা পাকিস্তান আন্দোলন ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হতো না মন্তব্য করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, তারা পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭১ এর ‘প্রশ্নটির’ সমাধান করতে চান। গতকাল রোববার (১ সেপ্টেম্বর) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমদ মারুফ আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন বলে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহের কথা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ‘সমাধানে’ আগ্রহের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। এতে বলা হয়, সাক্ষাতে উপদেষ্টাকে পাকিস্তানি হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ এর প্রশ্নটিকে সমাধান করতে চাই। কিন্তু গত সরকার আমাদেরকে আলোচনার কোনো সুযোগ দেয়নি এবং ইচ্ছে করেই ৭১ ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখত।’
সৈয়দ আহমদ মারুফ বলেন, ‘চাইলে বহু আগেই এটির সমাধান করা যেত। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।’ নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের আদর্শে ১৯৭১ ছিল ‘ইতিহাসের শেষ অধ্যায়’। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ৭১ এর প্রশ্নটির সমাধান করতে চাই।
একটি গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়ার জন্য পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা প্রয়োজন বলে মত দিয়ে নাহিদ বলেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে যেকোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। পাকিস্তান হাইকমিশনার বন্যা দুর্গতদের জন্য সহযোগিতার প্রস্তাব দিলে উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আপাতত সাহায্যের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে তখন জানানো হবে।
পাকিস্তানি পরাধীনতা থেকে মুক্ত হতে ১৯৭১ সালে ৯ মাস ব্যাপী সশস্ত্র লড়াই করেছিল বাংলাদেশের জনগণ। তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্যাতনে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বলে ইতিহাসে লেখা রয়েছে। সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়া এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ওই গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি করে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরে দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উত্থান-পতন ঘটলেও এর কোনো সমাধান আজও আসেনি।
উপদেষ্টা নাহিদকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, ভিসা প্রদান ও বিমানবন্দরে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে’ গত ১৫ বছর তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। নাহিদ বলেন, ইন্দো-মুসলিম সভ্যতার অংশ হিসেবে উপমহাদেশে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত সম্পর্ক রয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার প্রয়োজন৷
এদিকে হাইকমিশনার বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের গভীর বন্ধন রয়েছে। যদিও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশেষত্ব দিয়েছে। এসময় হাইকমিশনার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে অভিনন্দন জানান এবং তারা সিরিজ হেরে যাবেন বলেও আশঙ্কা করেন।