এবার গত কয়দিন যাবত টক অব দ্য টাউন কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা যাবে কি-না তা নিয়ে। এনিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা ও বিতর্ক। গত শনিবার (২৪ আগস্ট) মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়জন বাংলাদেশি স্কলারের সাথে কথা বলে জানা গেল, ইসলামি শরীয়াহ মতে মসজিদে দানকৃত টাকা মসজিদের উন্নয়ন ব্যতীত অন্য কোথাও অনুদান দেওয়া বা খরচ যাবে না, এটা নাজায়েয।
বিশ্ববিখ্যাত ফতোয়া বিভাগ—দারুল উলুম দেওবন্দকে, মসজিদ ফান্ডের টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে কি না? এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে জবাবে তারা বলেন— ‘মসজিদ ফান্ডের টাকা মুতাওয়াল্লি এবং কমিটিকে মসজিদের প্রয়োজন ও উন্নয়নেই ব্যবহার করতে হবে। মসজিদ ফান্ডের টাকা থেকে অভাবগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত বা অসুস্থ ব্যক্তিকে দান-খয়রাত করা জায়েয হবে না।
হ্যাঁ তবে—মসজিদ ফান্ডের টাকা যদি মসজিদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হয় এবং অদূর ভবিষ্যতে এই টাকা মসজিদের প্রয়োজনে লাগবে না এমন হয়, তাহলে স্থানীয় আলিম ও সৎ মুরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করে অন্য একটি গরীব মসজিদে ব্যয় করা যাবে। অর্থাৎ মসজিদের উদ্বৃত্ত অর্থ অন্য একটি অভাবগ্রস্ত মসজিদে ব্যয় করতে হবে।’’ (দারুল উলুম দেওবন্দ ওয়েবসাইট ফতোয়া নং 604239)
তাই কিশোরগঞ্জ পাগলা মসজিদের টাকা—দেশের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকার মসজিদ গুলোতে ব্যয় করা যেতে পারে। আমাদের দেশে এমন শত শত মসজিদ পাওয়া যাবে যেগুলো টিনের তৈরী—বৃষ্টি আসলে পানি পড়তে থাকে। সেসব মসজিদ পুনঃনির্মাণে এ টাকা ব্যবহার করা যেতে পারে। আমার জানা মতে পাগলা মসজিদের টাকা এ প্রকল্পে ইতিপূর্বে ব্যবহার হয়েছেও। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা বৈধ হবে না। সেটা সরকারই করুক অথবা মসজিদ কমিটিই করুক। (হানাফী ফিকহ-Hanafi Fiqh)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى... إلخ
"প্রত্যেকের কাজ নির্ভর করে তার নিয়তের উপর। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।"
(সহিহ বুখারী: ১)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, সম্পদ ব্যবহারে নিয়ত ও প্রয়োজনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা হলো :
أنه حض الناس على إعطاء مكاتب ، ففضل شيء عن حاجته فصرفه في المكاتبين
তিনি একদা একজন মুকাতাবের (যে মুক্তি পাওয়ার জন্য মালিকের সাথে চুক্তি করেছে) জন্য মানুষকে দান করতে উৎসাহিত করেন। দেখা গেলে তার মুক্তি হয়ে যাওয়ার পরেও কিছু অর্থ বাকি থেকে যায়। অত:পর তিনি এই অতিরিক্ত সম্পদ অন্যন্য মুকাতাবের (মুক্তির জন্য চুক্তিকৃত দাস) ক্ষেত্রে ব্যয় করেন। (মুসান্নাফ :৮/৩৭২)
এদিকে উপরিউক্ত দুটি হাদীস থেকে বুঝা যায়, মসজিদে দানকৃত অর্থ নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করতে হবে। তবে ফিক্বহের অন্যান্য গ্রন্থ ও নির্ভরযোগ্য আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, যদি মসজিদের জন্য দান করা অর্থের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত অর্থ থাকে, তাহলে তা অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যেমন মানবিক সাহায্য বা অন্যান্য প্রয়োজনে যেমন বন্যার্তদের মতো জরুরি মানবিক সহায়তায়ব্যবহার করা যেতে পারে।