, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ , ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


'আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই ভাবতেই কষ্ট লাগে, তার শরীরে ৩২টি গুলি করা হয়েছে' 

  • আপলোড সময় : ১৮-০৮-২০২৪ ১০:২৬:১৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৮-২০২৪ ১০:২৬:১৮ পূর্বাহ্ন
'আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই ভাবতেই কষ্ট লাগে, তার শরীরে ৩২টি গুলি করা হয়েছে' 
এবার লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত হওয়া আফনান পাটওয়ারি ও সাব্বির আহমেদ এর পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের হুমকিতে পড়ে এখন প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। বাসায় তালা ঝুলিয়ে অন্যস্থানে আশ্রিত থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে এসব পরিবার সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। এদিকে নিহত আফনান ও সাব্বিরের সহপাঠিরা তাদের কোনভাবেই ভুলতে পারছেন না, তারাও বিচার দাবি করেন।
 
এদিকে সরেজমিন শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার আরমান মিঝি মসজিদ বাড়ি আফনানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বসত ঘরে ঝুলছে তালা। আশেপাশের লোকজন বলছেন, তারা বাড়িতে নেই, ভয়ে বাড়ি ছাড়া আফনানের মা ও একমাত্র বোন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় (আন্দোলনরত অন্যদের সহযোগিতায়) প্রায় ১ ঘণ্টা পর আশ্রিত গোপন ঠিকানা থেকে বাড়িতে আসেন তারা। এ সময় সহপাঠিদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার মা ও বোন।
 
এ সময় আফনানের মা নাছিমা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ৩ মাস আগে আমার স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা গেছে। সেই শোক সইতে না সইতে আমার ছেলেকে হারালাম। তারা (সন্ত্রাসীরা) আমার মেধাবী ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমরা মামলা করেছি, এখন বিভিন্ন ফোন থেকে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এমন পরিস্থিতিতে কার কাছে যাব আমরা। সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি করে তাদের আর দেখার আর কেউ নেই বলে অচেতন হয়ে পড়েন।

তার পাশে থাকা আফনানের বোন জান্নাতুল মাওয়া মাকে আগলে ধরে বলেন, আদরের ভাইটিকে সবচাইতে বেশি ভালবাসতেন মা, ৩ মাসের ব্যবধানে বাবা ও ভাই হারিয়ে এখন শোকে বিহ্বল। স্মৃতি রয়ে গেছে একটি সাইকেল। তবে ভাই হত্যার কঠোর বিচার দাবি করেন সরকারের কাছে।
 
একই দাবি জানান সহপাঠিরাও। সে দিনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বই খাতার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যান আফনান। হঠাৎ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় পড়েন তারা। সহপাঠি এক শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী) বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। এ সময় মাদাম ব্রিজের ওপর লুটিয়ে পড়ে। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখান থেকে হাসপাতাল ও বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে (চলমান) এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
 
এদিকে, আন্দোলনে নিহত আরেকজন সাব্বির হোসেন রাসেল। শহরের মনির উদ্দিন পাটোয়ারী বাড়ি নানার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে আসছিলেন। এইচএসসি পাশ করে দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। সাব্বিরের নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এখনো থামেনি পরিবারের আহাজারি। চলছে শোকের মাতম। ১৪ মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী তর্না আক্তার, বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাসহ পরিবার অনেকটাই বাকরুদ্ধ অবস্থায়।

নিহত সাব্বিরের স্ত্রী তর্না জানান, আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই ভাবতেই কষ্ট লাগে, তার শরীরে ৩২টি গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি করেছে তাদের বিচার চাই। শিশুটি নিয়ে বাঁচতে কিছু করে জীবিকা নির্বাহে সরকারি সহায়তা চান তিনি। এদিকে দুই মেয়ে আর এক ছেলের বড় ছেলেটাই এখন আর নেই, সে আর ফিরবে না। তার বই খাতা নিয়ে ছেলেকে স্বরণ করছেন মা মায়া বেগম। তিনি জানান, ছেলে আর মা ডাকবে না, কিভাবে ভুলি তারে, সে আমার কাঁধে হাত রেখে হাঁটতো, খবর নিতো এখন কে খবর নিবে, সরকারের কাছে দাবি জানাই ছেলের হত্যাকারী তাহেরপুত্র টিপু ও শাহীনসহ হত্যাকারীদের বিচার চাই, শহরের দক্ষিণ তেমুহনীকে শহীদ সাব্বির চত্বর ঘোষনা করার দাবি জানাই। 
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ষড়যন্ত্র তত বৃদ্ধি পাবে: তারেক রহমান

নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ষড়যন্ত্র তত বৃদ্ধি পাবে: তারেক রহমান