, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তার সোহেলের বোন শিক্ষা অফিসার, ভাবি শিক্ষক

  • আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ০১:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৪ ০১:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন
প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তার সোহেলের বোন শিক্ষা অফিসার, ভাবি শিক্ষক
এবার পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা বর্তমানে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এ অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৭ জনের একজন কুমিল্লার আবু সোলাইমান মো. সোহেল (৩৫)। তার বোন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ভাবি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। সোহেলের ফাঁস করা প্রশ্নপত্রেই বোন ও ভাবির চাকরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোহেলের বোন হালিমা বেগম ও ভাবি নাজনিন সুলতানা পলি।

স্থানীয়রা জানান, সোহেল আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের বানাশুয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে। তার বাবা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কিছু জমিজমা লোক দিয়ে চাষাবাদ করে জীবন যাপন করতেন। তিন ভাই-দুই বোনের মধ্যে সোহেল সবার ছোট। বানাশুয়া প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও পরবর্তীতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে সোহেল সপরিবারে রাজধানীর মিরপুরে থাকেন।

সোহেল নিজেকে প্রপার্টি ডেভেলপার ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিতেন। গত ১৫ বছরে নিজ এলাকায় ৩০-৩৫ বিঘা জমি কিনেছেন। তার বড় ভাই সুজনের একটি স্বর্ণের দোকান আছে কুমিল্লা শহরের ছাতিপট্টিতে। মেজো ভাই খালেদ হোসেনেরও স্বর্ণের দোকান আছে বুড়িচং সদরে। দুই দোকানেই বিনিয়োগ আছে সোহেলের।

কিছুদিন আগে তিনি বাড়ির পাশে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ৬০ শতক জমিও ক্রয় করেছেন। হঠাৎ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার এ রহস্য হিসেবে নিজ এলাকায় গল্প ছড়িয়ে দেন, আমেরিকার এক লটারিতেই খুলেছে তার ভাগ্য। এমনকি গল্পটি এলাকাবাসীকে এমনভাবে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন, যে সোহেলের প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারটি সামনে আসার পর যারপরনাই অবাক তারা!

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সোহেলের বোন হালিমা বেগম উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হয়েছেন। জীবনে তিনটি চাকরির পরীক্ষার আবেদন করে দুটিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর মধ্যে একবার বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিতেও পাস করতে পারেননি। অন্যটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও সেটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পান তিনি। এরপর ১০ বছর ধরে এই পদেই চাকরি করছেন। বর্তমানে তিনি মুরাদনগর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
 
এ বিষয়ে হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের প্রশ্নে আমি পরীক্ষা দিইনি। আমি নিজ যোগ্যতায় পাস করেছি। যদিও বিসিএস প্রিলিতে আমি পাস করতে পারিনি। ভাইয়ের এসব বিষয়ের জড়িত থাকার বিষয়টি আমার বিশ্বাস হয় না। কারণ, আমার ভাই তিনবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। যদি প্রশ্ন পেতো তাহলে তো চাকরি হতো। সে কোনোবার পাস করেনি। সে তো চাকরি নেয়নি। মানে প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে না।’

এদিকে সোহেলের বিপুল সম্পদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের। আমাদের টাকাপয়সার অভাব ছিল না। সোহেল শেয়ার, বন্ড, বিল্ডার্স, ল্যান্ডসহ বিভিন্ন ব্যবসা করতো। তা থেকেই সে এসব সম্পত্তি গড়েছে। সোহেল অনেক আগে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। তিন মাস আগে সেটা ফেরত দিয়েছে। আমার ভাই ভালো। কে জানি আমাদের সর্বনাশ করলো, বুঝতেছি না।’

অন্যদিকে সোহেলের ভাবি নাজনিন সুলতানা পলি ২০১১ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে ২০১২ সালে পরীক্ষা দেন। ২০১৪ সালে তিনি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি মহিষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত আছেন।

এদিকে নাজনিন সুলতানা পলি বলেন, ‘আমি আমার যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। এই চাকরি ছাড়া তেমন কোনো চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিইনি। আমি ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম, সোহেলের ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিলে তো আরও ভালো চাকরি করতাম। আরও ভালো চাকরি পাওয়া দরকার ছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলম বলেন, ‘বিষয়টি খুবই কনফিডেনশিয়াল (গোপনীয়)। বিষয়টি সত্য হলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে আমাদের সহযোগিতা লাগলে আমরা প্রস্তুত আছি। এ ছাড়া কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেবে অন্তর্বর্তী সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা

নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেবে অন্তর্বর্তী সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা