এবার সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আন্দোলনে এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান একাত্মতা পোষণ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহাবুদ্দিন। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে নয়টা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আন্দোলনের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করে শাহাবুদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি বলেন, আমি নিজেও চাকুরির জন্য পড়াশোনা করছি। এখন যদি কোটা ব্যবহার করি তাহলে হয়তো বন্ধুদের আগেই চাকুরি হয়ে যাবে। কিন্তু এটা তো বৈষম্য, এটা হতে পারে না। তাই আমিও মনে করি কোটা পদ্ধতির সংস্কার দরকার।
পরে বেলা ১১ টায় আন্দোলরত দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি শেষে কাজলা গেট হয়ে আবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ফিরে আসেন। সেখানে ‘রাষ্ট্রকথা’ নামে এক পথনাট্য শেষে তারা দুপুর ১টার দিকে দিবসের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই হবে একসাথে’ ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়াও ‘১৮ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান কোটার থেকে অবসান’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
এক শিক্ষার্থী খালি গায়ে পিঠে এবং বুকে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা এবং মেধাবীরা মুক্তিপাক’ লিখে প্রতীকী আন্দোলন করেন। এছাড়াও স্লোগানের পাশাপাশি প্রতিবাদী গান গেয়েও প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। ‘শিক্ষার্থীবৃন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে, তবে কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে, এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকবে; প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভের মুখপাত্র ও রাসকু আন্দোলনের সদস্য সচিব আমান উল্লাহ খান আমান বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পরও হাইকোর্ট কীভাবে সেটা অবৈধ ঘোষণা করে! এটা এই সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার মধ্যে এটা অন্যতম। নির্বাহী বিভাগ আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে মশকরা শুরু করেছেন। কোটা সংস্কার নিয়ে আমাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখবো।