ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল তার। বিমান বাহিনীর পাইলট হয়ে নিয়মিত উড়তেন আকাশে। কিন্তু উড়তে গিয়েই অকালে ঝরে যাবে অসীমের প্রাণ- সেটি হয়তো ভাবেননি কেউ। এক বিমান দুর্ঘটনায় ঘনকালো আঁধার নেমে এলো অসীমের জীবনে। ফলশ্রুতিতে জীবন দিতে হলো তাকে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অসীমসহ দুজন। তাদের উদ্ধার করে পতেঙ্গার বনৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান অসীম।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর ওয়াইএকে১৩০ নামে যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ সময় বিমানের পেছন দিকে আগুন ধরে যায়। পরে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে।
জানা যায়, স্কোয়াড্রন লিডার অসিম জাওয়াদ ২০০৭ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমিতে (বাফা)। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে তিনি একজন পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
এদিকে পিটি-৬, এল-৩৯জেডএ, এফ-৭এমবি, এফ-বিজি১ ইত্যাদি বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল অসীম জাওয়াদের। তিনি ছিলেন এফ-৭এমজি১ এর অপারেশনাল পাইলট ও এলিমেন্ট লিডার। ‘ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে’ জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত ছিলেন।
বিভিন্ন কোর্সের তাগিদে ভ্রমণ করেছেন চীন, ভারত, তুরস্ক ও পাকিস্তান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর’স স্কুল অফ বিএএফ-এ স্টাফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ট্রেনিং জীবনে সকল বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য গৌরবমণ্ডিত ‘সোর্ড অফ অনার’ অর্জন করেন অসিম জাওয়াদ। এসসিপিএসসি-থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ‘সোর্ড অফ অনার’ বিজয়ী। ‘ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস’ কোর্সে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন ‘মফিজ ট্রফি’।
এর বাইরেও দায়িত্বশীলতা ও কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য চিফ অফ এয়ার স্টাফের প্রশংসা রয়েছে অসীমের ঝুলিতে। ব্যক্তিগত জীবনে দুই বছরের এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন অসিম জাওয়াদ। তার বিদায়ে পরিবার-স্বজনসহ বিমান, সেনা ও নৌ বাহিনীতে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।