ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যেই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতা ও বিধানসভার বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সোনারপুরে এক জনসভায় তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যারা ক্ষমতা থেকে সরাতে চায় সেই রাজাকার, জামায়াত, জেএমবির সদস্যদের আশ্রয় দিচ্ছেন মমতা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বড় সীমান্ত জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অনুপ্রবেশ, চোরাচালান অন্যতম বড় ইস্যু। সেটিকেই হাতিয়ার করে জেলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামতে চাইছে বিজেপি। এদিন জনসভায় শুভেন্দু বলেন পশ্চিমবঙ্গে দুই কোটি বেকার, ছয় লাখ কোটি রুপি ঋণের বোঝা, ৪৫ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক, বাঁচাবে কে? কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া পারবে? অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা আনতে গেলে আত্মকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গ গড়তে নরেন্দ্র মোদির সরকার ছাড়া সম্ভব নয়।
এর পরেই সরাসরি মমতা ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেন, "২০১৪ সালে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে, ২০১৪ সালের পর সেই বেড়া ডিঙিয়ে জামাত, জে এম বি, হেফাজতের লোকদের মমতা ব্যানার্জী ঢোকাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর গরু পাচার বন্ধ হয়েছে তেমনি সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ অনেকে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু গোসাবা ১৪ খানা দ্বীপ। যার একটায় মাত্র বিএসএফ রয়েছে। সেখানে জল দিয়ে ঢুকছে। আর এই বারুইপুর কামাল গাজীর রাস্তা ওদিকে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা বাংলাদেশে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যারা রাজাকারের পার্টি যারা হাসিনা ওয়াজেদকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়, সেই জামাত, রাজাকার, জেএমবির লোকেরা তারা ভারতবর্ষে ঢুকছে মমতা ব্যানার্জি তাদের ঢোকাচ্ছে।"
শুধু অভিযোগ করাই নয় রীতিমতো উদাহরণ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘গত বছর এই সোনারপুর বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপন করে থাকা বাংলাদেশি জঙ্গি আব্দুল মান্নান লালটু শেখ ধরা পড়েছিল, সেই কথা আপনাদের মনে আছে তো? তার দাবি ভারতীয় জনতা পার্টি ছাড়া এই ভারত ভূমিকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
এদিকে বছর তিনেক আগে শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে দীর্ঘ সময় তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ও মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ কৃষ্ণ প্রসাদ বসু বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য সহজে ফেলে দেওয়ার নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিদি - বোনের সুসম্পর্ক সবাই জানে।
কিন্তু এর পরেও বর্ধমানের খাগড়াগড়ে আমরা দেখেছি জামাত জঙ্গীরা বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য ভারতের অভ্যন্তরে কীভাবে অস্ত্রের গুদাম তৈরি করেছিল। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কান্ডেও একের পর এক বাংলাদেশী জঙ্গিরা এই বাংলা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে। সেই সময়গুলোতে শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সহযোগী হিসেবে দলটিতে প্রভাবশালী ভূমিকায় ছিলেন। তাই তার কোন বক্তব্যই হালকা হিসাবে নেওয়ার কারণ নেই।